দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
ফেমাস গ্রুপের দুইটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারের প্রায় ১৩ কোটি ৩৪ গ্রুপের দুইটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৮০ কোটি ২৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রয় তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বুধবার (২ মার্চ) ফেমাস গ্রুপের দু’টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে পরিহারকৃত ভ্যাট আদায়ের আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রতিবেদন ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দু’টো মূলত খাদ্য সামগ্রীতে ব্যবহৃত কেমিকেল (ফ্লে¬ভার) এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোড়কের প্যাকেজিং সামগ্রী উৎপাদন ও সরবরাহ করে।
ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন। তারা আরও জানান, ফেমাস গ্রুপের দু’টি প্রতিষ্ঠানের নাম এবং ঠিকানা হলো; ফেমাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ ৯৩ টঙ্গি শি/এ, গাজীপুর-১৭১০ এ অবস্থিত। এর মুসক নিবন্ধন নং- ০০০০০২২১১-০১০। অপর প্রতিষ্ঠানটি ওফমাস আইবারকেম ফ্লে¬ভারস এন্ড ফ্র্যাগনেন্সেস লি., ২০৮৯, কুনিয়া তারগাছ, গাজীপুর সদরে অবস্থিত। এর মূসক নিবন্ধন নম্বর -০০০১৩১৫৭৭-০১০৩। প্রতিষ্ঠান দ’ুটোর কর্পোরেট অফিস- ইসলাম লডস (২য় তলা), হাইজ-১৪, রোড-১৬/এ, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
জনৈক ব্যক্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে ওই প্রতিষ্ঠান দু’টির প্রকৃত সেবা বিক্রির তথ্য গোপন করে চালান ব্যতিত সেবা সরবরাহ করে দীর্ঘ দিন যাবৎ সরকারের বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদ্ধার করেন।
ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সাজেদুল হক এবং উপ-পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীনের নেতৃত্বে গত ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর ওই প্রতিষ্ঠানের প্র্রধান কর্পোরেট অফিস- ইসলাম লডস (২য় তলা), হাইজ-১৪, রোড-১৬/এ, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২ এ অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযানে গোয়েন্দার কর্মকর্তরা প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত ঘোষিত বিক্রয় তথ্য গোপন করে মাসিক দাখিলপত্রে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকির রেকর্ডপত্র ঋদ্ধার করেন।
অভিযানের শুরুতে কর্মকর্তাগণ প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক দলিলাদি প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু তারা রেকর্ডপত্র দেখাতে না চাইলে পরে ওই প্র্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালান। অভিযানে প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে ধারণকৃত তথ্যাদি যাচাই করে সেবা বিক্রি সংক্রান্ত বাাণিজ্যিক দলিলাদি লুকায়িত অবস্থায় আটক করা হয়।এসব তথ্য ভ্যাট দলিলাদির সাথে ব্যাপক অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হয়।
কর্মকর্তাদের তদন্তে ফেমাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং তথ্য অনুসারে ৮৬৯ কোটি ১০ লাখ ৮১ হাজার ৭২২ টাকার পণ্য বিক্রির তথ্য বেরিয়ে আসে। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় গাজীপুর ভ্যাট সার্কেল-৫ এ মাসিক রিটার্নে ৮২৭ কোটি ৯০ লাখ ৭১ হাজার ২৪৫ টাকা বিক্রিয় হিসাব প্রদর্শন করেছে। আয়কর রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রয়ের পার্থক্য পাওয়া যায় ৫৩ কোটি ৪৮ লাখ ৩ হাজার ৫১২ টাকা। এতে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫৬ হাজার ৯৮০ টাকা ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে।
এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২% হারে ২ কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৩৫ টাকা সুদ প্রযোজ্য। এছাড়াও ফেমাস আইবারকেম ফ্লেভারস এন্ড ফ্র্যাগনেন্সেস লি. ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৪৭ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৬৫১ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। তবে এই প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় ভ্যাট টঙ্গী সার্কেল-৪ এ মাসিক রিটার্নে ২০ কোটি ৫৯ লাখ ৩৭ হাজার ২৩০ টাকা বিক্রিয় হিসাব প্রদর্শন করেছে।
কিন্তু রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রয়ের পার্থক্য বেরিয়ে আসে ২৬ কোটি ৭৯ লাখ ৫৫ হাজার ৪২১ টাকা। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার ৭০৭ টাকা ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে।এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২% হারে ৪৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৬ টাকা সুদ প্রযোজ্য। ভ্যাট কর্মকর্তাদের তদন্তে ফেমাস গ্রæপের দু’টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ১০ কোটি ৪৭ লাখ ৭ হাজার ৬৮৭ টাকা এবং সুদ বাবদ ২ কোটি ৮৭ লাখ ৩৫ হাজার ৬৫১ টাকাসহ মোট ১৩ কোটি ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ৩৩৮ টাকা রাজস্ব ফাঁকির তথ্য উদঘাটিত হয়।
মঙ্গলবার (২ মার্চ) ফেমাস গ্রুপের দু’টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে পরিহারকৃত ভ্যাট আদায়ের আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রতিবেদন ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে প্রেরণ করা হয়েছে। #