দুরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে করোনা রোগীদের চিকিৎসার নামে,প্রতারণা, জালিয়াতি ও সরকারের কয়েকটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুদকের মামলায় চার্জশিট (অভিযোগপত্র) আমলে নিয়েছে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি আজাদ ও সাহেদের বিরুদ্ধে চার্জগঠনের শুনানি ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
আসামীরা করোনা আক্রান্ত রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা কথা বলে সরকারের কাছ থেকে এক কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকার মাসিক চাহিদা হাতিয়ে নিয়েছেন। একই সঙ্গে রোগীদের কাছ থেকে জনপ্রতি সাড়ে ৩ হাজার টাকা হিসেবে এক কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় দুদকের মামলায় চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত।
শুধু তাই নয়, রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকার পরও করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার জন্য চুক্তি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। আর ওই চুক্তির পর এক দিকে করোনা রোগীদের কাছ থেকে ইচ্ছা মতো ফি নিয়েছে। আবার চুক্তির দোহাই দিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখার চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও অন্য কর্মকর্তাদের খাবার খরচ বরাদ্দের বিষয়ে এক কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকার মাসিক চাহিদা তুলে নিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত এ চার্জশিট গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এ বদলির আদেশ দেন এবং আসামীদের বিরুদ্ধে আগামী ১৬ মার্চ চার্জ গঠনের শুনানি দিন ধার্য করেন।
কারাগাবন্দি সাহেদকে আদালতে হাজির করা হয়। এছাড়া জামিনে থাকা স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক আমিনুল হাসান, উপ-পরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. শফিউর রহমান এবং গবেষণা কর্মকর্তা ডা. দিদারুল ইসলামও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের ৩০সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
সূত্র মতে, ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী মামলাটি করেন। হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকার পরও করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার জন্য চুক্তি করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করা হয়। সেখানে আবুল কালাম আজাদকে আসামি করা হয়নি। তবে তদন্তে নাম আসায় চার্জশিটে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত মামলার এজাহার গ্রহণ করেন। এসময় দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীকে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে লাইসেন্স নবায়নবিহীন বন্ধ রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর, মেমোর্যান্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং সম্পাদন ও সরকারি প্রতিষ্ঠান নিপসমের ল্যাবে তিন হাজার ৯৩৯ জন কোভিড রোগীর নমুনা বিনামূল্যে পরীক্ষা করিয়েছেন।
এতে আরও বলা হয়, যেখান থেকে অবৈধ পারিতোষিক বাবদ রোগীপ্রতি সাড়ে তিন হাজার টাকা হিসেবে এক কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখার চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও অন্য কর্মকর্তাদের খাবার খরচ বরাদ্দের বিষয়ে এক কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকার মাসিক চাহিদা তুলে ধরেছেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়।#