দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি:
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের মামলায় ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে বিচারিক বিশেষ জজ আদালতের ১৩ বছরের সাজা কমিয়ে ১০ বছর বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালত একই সঙ্গে আসামীকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদন্ডে আদেশ দিয়েছেন। এ রায়ের ফলে দন্ডপ্রাপ্ত আসামী হাজী মোহাম্মদ সেলিমের জাতীয় সংসদ সদস্যপদ আর থাকবে না বলেছেন দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম ।
তিনি রায়ের কপি হাতে পেয়েই ণমাধ্যমকে বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত আসামী হাজী মোহাম্মদ সেলিমের এমপি পদ থাকবে না। তিনি আরো বলেছেন, সাজা বহালের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রায়ের কপি দুদকের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। এরপর স্পিকার হাজী মোহাম্মদ সেলিমের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের বিষয়ে আইনগত সিদ্ধান্ত নেবেন।
বুধবার (৯ ফেব্রæয়ারি) হাইকোটের্র বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বে ঘোষিত রায়ের কপি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত রায়ে আসামীর বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগে বিচারিক আদালতের দেওয়া তিন বছরের সাজা বাতিল করা হয়েছে। ২০২১ সালের ৯ মার্চ হাইকোর্টের উক্ত ভার্চুয়াল বে এ রায় ঘোষণা করেছিলেন। আজ (বুধবার) ওই রায়ে দুই বিচারকের স্বাক্ষরে প্রকাশ করা হয়েছে।
হাইকোর্টের রায় প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে আসামী হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আত্মসমর্পণ না করলে আসামীর বিরুদ্ধে বিচারিক (নিম্ন) আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
আদালতের রায়ে প্রকাশ, বিশেষ জজ বিচারিক আদালতের রায়ে দন্ডিত আসামী হাজী মোহাম্মদ সেলিমের আপিল সংশোধন করে (আংশিক গ্রহণ ও আংশিক খারিজ) দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারা তথ্য গোপন সংক্রান্ত আপিল গ্রহণ করা হলো। এই আইনের ২৭ (১) অবৈধ সম্পদের অর্জন ও দখলে রাখার অভিযোগের আপিলের অংশ খারিজ করা হলো। বিচারিক আদালতে ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারা তথ্য গোপনের অভিযোগে ৩ বছর এবং ২৭ (১) ধারায় অবৈধ সম্পদের অর্জন ও দখলে রাখার অভিযোগে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছিলেন।
২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর দুদকের পক্ষ থেকে হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে লালবাগ থানায় মামলা করা হয়। ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল বিশেষ জজ আদালত আসামীরেক ১৩ বছরের কারাদন্ড দেন। একইসঙ্গে ২০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। পরে ২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর বিচারিক আদালরেতর রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট তার সাজা বাতিল করেন। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক।
দুদকের ওই আপিলের শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করেন । একই সঙ্গে হাইকোর্টে ওই আপিল (হাজী সেলিমের) পুনরায় শুনানি করতে বলা হয়। এরপর প্রায় পাঁচ বছর ওই আপিলের শুনানিকালে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর হাইকোর্ট বিচারিক আদালতে থাকা মামলার যাবতীয় নথি (এলসিআর) তলব করেন। এরপর গত বছরের ২৪ ফ্রেব্রæয়ারি আপিলটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।
মামলায় দুদকের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। হাজী সেলিমের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার ও আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান মনির ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তামান্না ফেরদৌস। #