দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
অনেক চেষ্টা এবং বার বার তলবি নোটিশ পাঠিয়েও জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক মহাসচিব বর্তমান কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং তার স্ত্রী বরিশাল-৬ আসনের এমপি নাসরিন রত্নাকে হাজির করা পারছে না দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। নানা কৌশলেও খোঁড়া অযুহাতে দুদকের তলবি নোটিশকে এরিয়ে যাচ্ছেন রুহুল আমিন হাওলাদার এবং তার স্ত্রী।
২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত কয়েক বার দুদকের তলবি নোটিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের আশ্রয় নিয়েছেন এ দম্পতি। চলতি ১০ জানুয়ারি (সোমবার) সকালে রুহুল আমিন হাওলাদার ও তার স্ত্রীকে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্রসহ দুদকে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু এবারও হাইকোর্টের দোহাই দিয়ে তারা দুদকে আসবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিপুল পরিমান অবৈধ সম্পদ অর্জন, রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সন্দেহজনক লেনদেনের ব্যাখ্যা দিতে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং তার স্ত্রী নাসরিন রত্নাকে তলব করেছে দুদক। ১০ জানুয়ারি (সোমবার) সকালে রুহুল আমিন হাওলাদার ও তার স্ত্রীকে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্রসহ দুদকে তলব করেছেন উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রুহুল আমিন হাওলাদার এবং তার স্ত্রী নাসরিন রত্নার নামে থাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। ওই অভিযোগ অনুসন্ধানে ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবার তাদের তলব করা হয়। কিন্তু তখন হাজির হননি। তারা সময় চেয়ে হাইকোর্টে টির আবেদন করেন। আদালত তাদের আবেদন আমলে নিয়ে দুই মাস সময় দেন। কিন্তু ওই দুই মাস পুনরায় দ্বিতীয়বারের মতো তাদেরকে তলব করা হলো।
দুদকের পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর রুহুল আমিন হাওলাদারের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বক্তব্য প্রদানের জন্য দুই মাস সময় দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে দুই মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। যারফলে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে স্ত্রীকে দুদকে পুনরায় হাজির হবার জন্য তলবি নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার কাছে তাদের বক্তব্য প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে,এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে কয়েকবার দুদকে তলব করা হলেও তিনি কোনোবারই দুদকে আসেননি। এবারও হাইকোর্টের দোহাই দিয়ে দুদকে না আসার নানা ফন্দি ফিকির শুরু করেছেন। সরকারি সম্পদ লোপাটের মাধ্যমে শত কোটি টাকার আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রুহুল আমিন হাওলাদারকে প্রথম দফায় তলব করে দুদক। ওই সময় জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির কারণ দেখিয়ে দুদকে হাজির না হয়ে তিনি হাজিরা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। পরে ২০১৯ সালের ২০ মে ওমরাহ হজে যাওয়ার প্রস্তুতির কারণ দেখিয়ে দুদকে হাজির হওয়া এড়িয়ে যান তিনি।
২০১৯ সালে ২৮ মার্চ রুহুল আমিন হাওলাদারকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। ওই নোটিশে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাওলাদার রিট আবেদন করলে আদালত প্রাথমিক শুনানি নিয়ে চার সপ্তাহের জন্য দুদকের তলবি নোটিশের কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়ে ছিলেন।
আরো অভিযোগ রয়েছে, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং তার স্ত্রী নাসরিন রত্নার বিরুদ্ধে। রাজধানীর গুলশানে হাওলাদার কমপ্লেক্স , তেজগাঁও শিল্পএলাকা মেটাল প্রোডাক্ট নামে বিশাল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পটোয়াখালীতে পর্যটন এলাকায়সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনেক জায়গা সম্পদের মালিক হয়েছেন তারা। পটোয়াখালীতে পর্যটন এলাকায় বিশাল আবাসিক হোটেল এবং ওই এলাকায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তারা। তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশনকে নিয়মিত হোল্ডিং ট্যাক্সও পরিশোধ করেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়েও হাইকোর্টে এবং আপিল বিভাগে মামলা দায়ের করে বছরের পর বছর পার করছেন।
এদিকে মুঠোফোনে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদককের। তিনি জানান, ১০ জানুয়ারি দুদকে তিনি এবং তার স্ত্রী আসবেন না। কারণ দুদকের তলবি নোটিশের বিরুদ্ধে গত বছর নভেম্বর রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি বে রুলসহ দুই মাস সময় দিয়েছে। দুই মাস পার হলেও আদালতের জারি করা রুলের নিষ্পত্তি হয়নি। এটা এখন বিচারাধীন বিষয়। রুলের বিষয়টি আদালতে নিষ্পত্তি এবং আদেশের পর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরো বলেন, হাইকোর্টের জারি করা রুলের কাগজপত্র দুদকের পাঠানো পর কেন আবার তাদেরকে তলবি নোটিশ পাটিয়েছেন এটা নিয়ে তিনি উল্টো প্রশ্ন তোলেন।#