দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
ঋন জালিয়াতি , ক্ষমতার অপর ব্যবহার এবং ১৩ কোটি ৪৩ লাখ ৭ হাজার ৭৩৯ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রূপালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. মাহমুদুল ইসলামসহ ৩ জনের বিরুদ্ধেমামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ফেরদৌস রহমান বাদী হয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপ পরিচালক মুহাম্মদ আরিফ সাদেক।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামীরা অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে আর্থিক লাভের জন্য প্রতারণা, দুর্নীতি, জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে খুলনা জেলার দাকোপ থানাধীন ,দাকোপ মৌজার অন্যের ৩ দশমিক ৫৩২ একর জমি নিজের দাবি করে রূপালী ব্যাংকে জামানত হিসাবে বন্ধকি প্রদান। এছাড়া বন্ধকীকৃত জমি অধিক মূল্যে মূল্যায়ন নির্ধারন করা হয়। তারা রূপালী ব্যাংক লিমিটেড থেকে ঋণ বাবদ ১৩ কোটি ৪৩ লাখ ৭ হাজার ৭৩৯ টাকা নিয়ে পরিশোধ না করে আত্মসাৎ করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন বি জি ব্ল্যাক টাইগার অ্যাগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ খান গেদু, রূপালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. মাহমুদুল ইসলাম ও সিনিয়র অফিসার কে বি এম সিরাজুদ্দৌলা।
বি জি ব্ল্যাক টাইগার অ্যাগ্রো লিমিটেডের নামে ২০১৪ সালে ১৬ নভেম্বর রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, শামস্ ভবন করপোরেট শাখা খুলনায় চলতি হিসাব খোলা হয়। ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ খান গেদু প্রকল্প ঋণ বাবদ ২৯ কোটি ৩৯ লাখ এবং চলতি মূলধন ঋণ বাবদ ৮ কোটি টাকার জন্য ব্যাংকে আবেদন করেন।
আবেদন প্রাপ্তির পর শাখার ঋণ কর্মকর্তা কে বি এম সিরাজুদ্দৌলা ও শাখা ব্যবস্থাপক মো. মাহমুদুল ইসলাম প্রকল্প এলাকাসহ বন্ধকী জমি পরিদর্শন করে ২ দশমিক ০১৭ শতক জমির মূল্য ১৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা নির্ধারণ করেন। ওই বছরের মে মাসে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের ৯৭২তম সভায় গ্রাহক প্রতিষ্ঠান বি জি ব্ল্যাক টাইগার অ্যাগ্রো লিমিটেডের অনুকূলে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ও সিসি (হাইপো) ৩ কোটি কোটি টাকাসহ মোট ১৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা অনুমোদন করা হয়।
২০১৫ সালের জুলাইয়ে আসামি মো. মাহমুদুল ইসলাম ও কে বি এম সিরাজুদ্দৌলার সহায়তায় আরেক আসামি মো. আব্দুল্লাহ খান গেদু দাকোপ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বন্ধক নেওয়া ৩ দশমিক ৫৩২ একর জমিসহ ২০ দশমিক ১৭৩২ একর জমি সহায়ক জামানত হিসাবে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড করপোরেট শাখা, খুলনা-এর অনুকূলে রেজিস্ট্রি করে দেন।
দলিল দুটির সার্টিফাইড কপি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দলিল দুটির তফসিলে উল্লেখিত মূল মালিক যথাক্রমে মোস্তফা জামান (তুহিন) ও মোসা. জহুরা বেগম। এক্ষেত্রে বন্ধকীকৃত ২০ দশমিক ১৭৩ একর জমির মধ্যে ৩ দশমিক ৫৩২ একর অন্যের জমি ব্যাংকের অনুকূলে জামানত রেখে ঋণ অনুমোদন করা হয়।
মামলার তদন্তকালে অন্য কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তা আমলে নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে দুদক।
অনুসন্ধানকালে রেকর্ড দৃষ্টে দেখা যায়, ঋণ প্রস্তাব প্রেরণের সময় অর্থাৎ ২০১৫ সালের মৌজারেট অনুযায়ী খুলনা জেলার দাকোপ থানাধীন দাকোপ মৌজার প্রতি শতক বিলান জমির মূল্য ৪ হাজার ৬৮ টাকা হারে ১৯৯৪.১২ শতক বা ১৯.৯৪১২ একর জমির মূল্য ৮১ লাখ ১২ হাজার ৮০/-টাকা হয়। অপরদিকে ২০১৫ সালের মৌজারেট অনুযায়ী খুলনা জেলার সদর থানাধীন টুটপাড়া মৌজার প্রতি শতক বাস্ত জমির মূল্য ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৭৪৯ টাকা হারে ২৩.২০ শতক বা ০.২৩২০ একর জমির মূল্য ১ কোটি ৭১ লাখ ১৫ হাজার ৭৭৬ টাকা হয়।
অর্থাৎ ২০১৫ সালের মৌজারেট অনুযায়ী (১৯৯৪.১২+২৩.২০)= ২,০১৭.৩২ শতক জমির মূল্য হয় ২ কোটি ৫২ লাখ ২৭ হাজার ৮৫৬ টাকা। এক্ষেত্রে ২০১৫ সালের মৌজারেট অনুযায়ী অন্যের জমি বাদে গ্রাহকের অবশিষ্ট (২,০১৭.৩২-৩.৫৩২) = ২,০১৩.৭৮৮ শতক জমির মূল্য ৮১ লাখা ৯২,হাজার ৯০ টাকা হলেও ঋণ প্রস্তাব প্রেরণের সময় অতি মূল্যায়নের মাধ্যমে বন্ধকীকৃত জমির মূল্য মৌজারেট হতে (১৬ কোটি ৪৭ লাখ ৬ হাজার টাকা থেকে ৮১ লাখ ৯২ হাজার ৯০ টাকা বাদ দিলে দেখা যায়, ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ১৩ হাজার ৯১০ টাকা অধিক নির্ধারণ করা হয়েছে।#