দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি :
সমুদ্রে ও নৌ-পথে জাহাজে এবং ফেরীতে ঘণকুয়াশায় ব্যবহ্নত ফগ লাইটের পরিবর্তে সার্চ লাইট ক্রয়ের নামে ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা সরকারের ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ অভন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ডঃ জ্ঞান রঞ্জন শীলসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান বাদী হয়ে সজেকা, ঢাকা-১-এ আসামীদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি ৪২০/৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালে দুর্নীতি প্রতিরােধ আইনের ৫(২) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় ৭ আসামীর নাম ও পরিচয়; বাংলাদেশ অভন্তরীণ নৌ- পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) সাবেক জিএম ( মেরিন) ক্যাপ্টেন শওকত সরদার, সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিচালক (কারিগরি) ডঃ জ্ঞান রঞ্জন শীল, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপ-সচিব পঙ্কজ কুমার পাল,
বিআইডব্লিউটিসির মহাব্যবস্থাপক মো. নুরুল হুদা, সাবেক মহাব্যবস্থাপক বিএসএফআইসি (মেকানিক্যাল) ইঞ্জিনিয়ার মো. রহমত উল্লা,বিজেএমসি’র ম্যানেজার (মেকানিক্যাল) ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন এবং মেসার্স জনী কর্পোরেশন ৯৯৫ সরাইপাড়া,পোর্র্ট কানেকটিং রোড, পাহাড়তলী, চট্টগ্রামের মালিক লে. কম.ওমর আলী (অবঃ)।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ফগ সার্চ লাইট না থাকা সত্বেও বা জনী কর্পোরেশন দরপত্রের সংগে দাখিলকৃত মিথ্যা প্রত্যয়ন পত্র যাচাই না করে মিথ্যা তথ্য সম্বলিত উক্ত দরপত্রকে রেসপনসিভ দেখিয়ে ১০টি সার্চ ও ফগ লাইটের সরবরাহের আদেশ প্রদান করেন। আসামীরা পিএসআই কমিটি মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে সার্চ ও ফগ লাইটের স্থলে নিন্মমানের সার্চ লাইট সরবরাহ করে বিআইডব্লিউটিসির ফেরীতে ফগ লাইট স্থাপনের প্রকল্প ব্যর্থ করে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক অপরাধজনক করে পরস্পর যোগসাজসে সরকারের ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ক্ষতি সাধন করেছে।
আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ: দরপত্রে দু’খামের নিয়ম হচ্ছে প্রথমে কারিগরি দরপত্র মূল্যায়ন করা হয়। যে সকল দরপত্র দাতা কারিগরি দরপত্রে যোগ্যতা অর্জন করবে দরপত্র মুল্যায়ন কমিটি শুধুমাত্র তাদের আর্থিক দরপত্র খুলে উহা মুল্যায়ন করবে। কিন্তু এক্ষেত্রে কারিগরি দরপত্র ও আর্থিক দরপত্র একসাথে মুল্যায়ন করা হয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ যে সকল দরপত্র দাতাগণ কর্তৃক দরপত্রের সংগে দাখিলকৃত তথ্যাদি এবং রেকর্ডপত্র যাচাইকালে সঠিক বলে প্রমানিত হবে এবং দরপত্রের শর্তাবলীর সংগে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে তাদের দরপত্র রেসপনসিভ হবে এবং অন্যদের দরপত্র নন- রেসপনসিভ হবে। কিন্তু দরপত্র দাতাগণ কর্তৃক দরপত্রের সংগে দাখিলকৃত রেকর্ডপত্র যেমন আয়কর সংক্রান্ত কাগজপত্র, ট্রেড লাইসেন্স, অন্য সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা, আমদানী-রপ্তানী সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র, ভ্যাট ,ট্যাক্স সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র ইত্যাদি যাচাই না করেই মুল্যায়ন প্রতিবেদনে ঢালাওভাবে মেসার্স এম এন মল্লিক এন্ড কোং এর কয়েকটি আইটেমের কাগজ পত্রে গড়মিল রয়েছে। অন্যদিকে মেসার্স জনী কর্পোরেশনের ক্ষেত্রেও সঠিক রেকর্ডপত্র পাওয়া যায়নি এবং দাখিলকৃত উক্ত রেকর্ডপত্রগুলো যাচাই করা হয়নি মর্মে প্রতিয়মান হয়েছে।
গাড়ি বা যানবাহনে ব্যবহৃত ফগ লাইটের আলো হলুদাভ। কিন্তু এ ফগ লাইটের আলো এলইডি লাইটের মতো ধবধবে সাদা। ঘন কুয়াশায় উক্ত লাইটের আলো পড়লেই রিফ্লেকশন হয়ে আনুমানিক ২০ গজের মধ্যেও কোন কিছুই দেখা যায় না। সামনে লাইটের ঘন প্রতিবন্ধকতা/ দেয়ালের সৃষ্টি হয়। যার ফলে কোন কিছুই ভিজিবল হয় না।
লাইটের গায়ে, এয়াডাপটার ও কন্ট্র্রোল সুইচ সবখানেই এটা সার্চ লাইট লিখা আছে। এটা ফগ লাইট নয়। এটা মুলতঃ বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন সার্চ লাইট। ফগ ও সার্চ লাইট ক্রয়ের মূল উদ্দেশ্য সম্পূণরুপে ব্যর্থ হয়েছে এবং এই ক্রয়ে সরকারের যে অর্থ ব্যয় হয়েছে তা সম্পূর্ণরুপে অপচয় যা আর্থিক বিধি-বিধানের পরিপন্থী । পিএসআই সম্পন্নকারী কর্মকর্তাগণ লাইট ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি প্রকৃত প্রস্তুতকারীর ফ্যাক্টরিতে উপস্থিত হয়ে পরিদর্শন করেননি। কর্মকর্তাগণের অবস্থান হোটেল প্রাঙ্গণে যন্ত্রপাতি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।পিএসআই দলকে তাঁরা ১০ কিঃ মিঃ দূর থেকে লাইটের আলো দেখা যাচ্ছে এ রকম কোন পরীক্ষা করে দেখাননি।
লাইটগুলি দাবী অনুযায়ী ফগ লাইট হিসেবে কাজ করে না এবং পিএসআই দল ফগ লাইট সম্পর্কিত বিষয়টি না বুঝেই সকল কিছু সামঞ্জস্যপূর্ণ পাওয়া যায় মতামত দিয়ে পিএসআই কমিটি মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে সার্চ ও ফগ লাইটের স্থলে নিম্নমানের সার্চ লাইট সরবরাহ নিয়ে বা সরবরাহ করে বিআইডব্লিউটিসির ফেরীতে ফগ লাইট স্থাপনের প্রকল্প ব্যর্থ করে ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে পরস্পর ।