দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
বঙ্গবন্ধু চত্বর ও চত্বর সংলগ্ন এলাকার অলি-গলি বিবেচনায় নিয়ে পথচারীবান্ধব সড়ক পরিকল্পনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
আজ বুধবার (১ ডিসেম্বর) সাপ্তাহিক নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস করপোরেশনের ময়লারবাহী গাড়ি দ্বারা নিহত নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের দুর্ঘটনাস্থলে পথচারী পারাপার সেতু (ফুটওভার ব্রিজ) নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন।
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “কয়েকদিন আগেই নটরডেম কলেজের মেধাবী ছাত্র নাঈম হাসান এখানে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি আমাদের গাড়ির চাপায় নিহত হয়েছে। সে জায়গাটা আমরা পরিদর্শন করেছি। এখানে (বঙ্গবন্ধু চত্বর) যদিওবা আগে থেকেই পাতালে (মাটির নিচ দিয়ে) পথচারী চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল কিন্তু সেই পথচারী পারাপার বিভিন্নভাবে দখলের কারণে অকার্যকর হয়ে আছে।
যার কারণে সাধারণ যাত্রী ও জনগণ নিচে নেমে পারাপার না করে রাস্তার উপর দিয়েই পারাপার করতে বাধ্য হয়। এজন্য আমাদেরকে নতুনভাবে চিন্তা করতে হচ্ছে। তাই পুরো বঙ্গবন্ধু চত্বর ও আশাপাশের অলি-গলি নিয়েই একটা সড়ক পরিকল্পনা করতে হবে, পরিবহন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। না হলে কোনও উদ্যোগই এখানে কার্যকর হবে না। বঙ্গবন্ধু চত্বর ও পুরো এলাকা নিয়েই পথচারীবান্ধব সড়ক পরিকল্পনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।”
গুলিস্তানে আগেও অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে কিন্তু কোনটাই ফলপ্রসূ, কার্যকর করা যায়নি জানিয়ে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “এখানে কয়েকমুখী যাত্রায়ত ব্যবস্থা (লক্ষ্য করা য়ায়)। প্রত্যেকটি যাতায়ত ব্যবস্থাকে কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করবো এবং আমরা নিজস্ব অর্থায়নেই সেই কার্যক্রম আরম্ভ করবো।”
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, আমাদেরকে বিশেষজ্ঞ মহলের মাধ্যমে পরিপূর্ণ ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট এন্ড ট্রান্সপোর্ট প্লানিংয়ের মাধ্যমে সুদূরপ্রসারী চিন্তা করতে হবে। শুধুমাত্র একটা কিছু করে ফেললে তা কাজে দিবে না। আমরা চাই কার্যকর ব্যবস্থা। যত দিন যাবে এই এলাকায় যান চলাচল ততই বাড়বে। তবে এখানে আমরা যেটাই (স্থাপনা) করি, সেটাই আমাদের মেধাবী ছাত্র নাঈম হাসানকে উৎসর্গ করবো।
হকাররা পথচারী চলাচলের পথ দখল করে রাখে – এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “যে কোন শহরেরই একটি বড় সমস্যা — হাঁটার পথ, রাস্তাগুলো দখল হয়ে যায়। বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল ও হকাররা এগুলো দখল করে থাকে। এটাও কিন্তু সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা নিতে হবে। কারণ, আমরা লক্ষ করেছি যে — হকারদেরকে এক দিকে উঠালে তারা নতুন করে আবার জায়গা নিয়ে নেয়।
তাদের পূর্নবাসনও কিন্তু চিন্তা করতে হয়। তাকে একটি জায়গা দিতে হবে যেখানে সে উপার্জন করতে পারে। আমরা এগুলো নিয়ে আলাপ করছি। আমরা আশা করছি, আগামী বছর থেকে আমরা এই বিষয়গুলো খাতিয়ে দেখবো। আমরা ভাববো।
আমরা বিশেষজ্ঞ মহল ও হকার প্রতিনিধি যারা আছেন, তাদেরকে নিয়ে আলাপ করবো। পর্যায়ক্রমে কিছু কিছু রাস্তাকে লাল, সবুজ, হলুদ এভাবে চিহ্নিত করে যেমন লাল, সবুজ , হলুদ এভাবে চিহ্নিত করে হকার দেরকে পূর্নবাসনের মাধ্যমে আমাদের সড়ক ব্যবস্থা, হাঁটার পথ, পথচারী পারাপার আমরা দখলমুক্ত করবো।”
ময়লাবাহী গাড়ির জন্য চালক সংকট নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরেই এই বিষয়টা আমার নজরে আসে যে, আমাদের পর্যাপ্ত গাড়ি চালক নেই। এরপর আমরা নিয়োগের উদ্দ্যেগ গ্রহণ করেছি। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত — আমরা ৫০ জন ভারী গাড়ি চালকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম। আমরা ৩২ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করতে পেরেছিলাম। কিন্তু বিআরটিএ থেকে যথাসময়ে লাইসেন্স প্রদান না করার কারণে আমরা মাত্র ১৯ জনকে নিয়োগ দিতে পেরেছি। আমাদের সাংগঠনিক কাঠামোতে (অর্গানোগ্রাম) ১৮৩টি পদ আছে।
সেই হিসেবে আমাদের পর্যাপ্ত গাড়ি চালক নেই। কিন্তু যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেই গাড়িতে আমাদের নিয়মিত গাড়ি চালককেই দায়িত্ব দেওয়া ছিল। কিন্তু সেই চালক দায়িত্বে অবহেলা করে, গাফিলতি করে আরেকজন ভাড়াটিয়া চালককে দিয়েই গাড়ি চালিয়েছে। সেটি জঘন্যতম অন্যায় করেছে। এই বিষয়ে এরই মাঝে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমরা আরও একজনকে সনাক্ত করেছি, যে তার দায়িত্বে অবহেলা করেছে। তাকেও আমরা সাময়িক বরখস্ত করেছি। আমরা কঠোরভাবে এ ধরনের কার্যক্রম দমন করবো।
এর আগে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস নগরীর ৫৬ নং ওয়ার্ডে অন্তবর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র এবং বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম বাস্তবায়নে অংশ হিসেবে মতিঝিলে নির্মিত যাত্রী ছাউনি পরিদর্শন করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর সিতওয়াত নাঈম, প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহমদ, সচিব আকরামুজ্জামান, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের আনিকবৃন্দ এবং ওয়ার্ডসমূহের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলরবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
# প্রেস বিজ্ঞপ্তি ।