দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের সাথে সাথে আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছেন তালেবান যোদ্ধারা। বর্তমানে আফগানিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী শহর কান্দাহার, লশকর গাহ ও হেরাতসহ বিভিন্ন স্থানে আফগান বাহিনীর সাথে তুমুল লড়াই চারিয়ে যাচ্ছেন তালেবান যোদ্ধারা।
এদিকে গত ২ আগস্ট (সোমবার) পৃথক পৃথক টুইট বার্তায় তালেবানের বিরুদ্ধে বেসামরিক বাসিন্দাদের গণহত্যার অভিযোগ করেছে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের দূতাবাস।
দুই দূতাবাসের টুইট বার্তাতেই বলা হয়, আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তবর্তী স্পিন বোলদাকে তালেবান কয়েক ডজন বেসামরিক বাসিন্দাকে প্রতিশোধমূলক হত্যা করেছে। এই গণহত্যা যুদ্ধাপরাধের শামিল। টুইট বার্তায় তালেবান নেতৃত্বের প্রতি এই হত্যাকাণ্ডে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানানো হয়।
টুইট বার্তায় বলা হয়, ‘যদি আপনারা আপনাদের যোদ্ধাদের এখন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তবে পরবর্তীতে আপনাদের শাসনের কোনো অধিকারই থাকবে না।’
দুই দূতাবাসের টুইট বার্তাতেই বলা হয়, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস যৌথভাবে ‘যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দুই দূতাবাস পৃথক টুইট বার্তায় গজনির মালিস্তানে তালেবানের বিরুদ্ধে ৪০ জনের বেশি বেসামরিক লোক হত্যার অভিযোগ করে।
কাতারের দোহাভিত্তিক তালেবান প্রতিনিধি দলের সদস্য সুহাইল শাহিন এই অভিযোগকে অস্বীকার করে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে জানিয়েছেন, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।
এর আগে স্পিন বোলদাকে তালেবান যোদ্ধাদের প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী আফগানিস্তান ইন্ডিপেন্ডেন্ট হিউম্যান রাইটস কমিশন।
প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, তালেবান যোদ্ধারা স্পিন বোলদাক জেলা দখলের পর সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তাদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করছে। এমনকি যুদ্ধে যাদের লড়াইগত কোনো ভূমিকা ছিলো না, তাদেরও হত্যা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, স্পিন বোলদাকে অন্তত ৪০ জনকে হত্যা করা হয়েছে।
অপরদিকে আফগানিস্তানের হেলমানদ প্রদেশের রাজধানী লশকর গাহে তালেবানের সাথে প্রায় এক সপ্তাহ লড়াই অব্যাহত রেখেছে আফগান সামরিক বাহিনী।
হেলমানদের সামরিক দফতর জানায়, আফগান বাহিনী ভূমি ও আকাশ থেকে হামলা প্রতিরোধ করছে। আফগান সামরিক বাহিনী- ছবি : আলজাজিরা/আনাদোলু এজেন্সি
সোমবার পর্যন্ত হেলমানদের ১৫ জেলার মধ্যে ১২ তালেবান যোদ্ধারা দখল করে নিয়েছে বলে নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে।
লশকরগাহে সংঘর্ষের কারণে হেলমানদ থেকে সবধরনের গণমাধ্যম সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে।
আফগানিস্তানে দুই দশক চলমান যুদ্ধের অবসানে গত কয়েক বছর সংঘর্ষরত তালেবানের সাথে আলোচনা শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট। দীর্ঘ আলোচনার পর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাতারের রাজধানী দোহাতে এক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করে।
চুক্তির অধীনে তালেবান সহিংসতা ছেড়ে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণে সম্মত হয়। বিনিময়ে দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল বিদেশী বাহিনীকে এই বছর ১ মে সময়সীমায় প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
তবে গত ১৪ এপ্রিল হোয়াইট হাউজে এক ঘোষণায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নতুন করে এই সময়সীমা ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ান। পরে ৮ জুলাই অপর এক ঘোষণায় এই সময়সীমা কমিয়ে এনে ৩১ আগস্ট নির্ধারণ করেন বাইডেন।
বাইডেনের ঘোষণা অনুসারে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য ৩৫টি দেশের নয় হাজার পাঁচ শ’ ৯২ সৈন্য প্রত্যাহারের কথা রয়েছে। এরই মধ্যে ৯৫ ভাগ সৈন্যকে আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করানো হয়েছে।
মার্কিনিদের সাথে চুক্তি অনুসারে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারের সাথে তালেবানের সমঝোতায় আসার কথা থাকলে এখনো কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি দুই পক্ষ। সমঝোতায় না পৌঁছানোর জেরে তালেবান আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে। সমঝোতা না হওয়ার জন্য আফগান সরকারকে অভিযুক্ত করছে তালেবান।
সমঝোতা না হওয়ার জেরে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের সুযোগে আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে তালেবান।
# সূত্র : আলজাজিরা ও তোলো নিউজ