দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
অবশেষে রাজশাহীর আড়ানী পৌর সভার বহুল আলোচিত মেয়র মুক্তার আলীকে পাবনার ঈশ্বরদী থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারবিরুদ্ধে কলেজ শিক্ষক মনোয়ার হোসেন মজনুর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা রয়েছে।
আজ শুক্রবার (০৯ জুলাই) ভোর ৫টার দিকে ঈশ্বরদীর পাকশী ফুরফুরা শরীফ সংলগ্ন এলাকার এক নিকটাত্মীয়ের বাড়ি থেকে পৌর মেয়র মুক্তার আলীকে গ্রেফতার করা হয়। একই সাথে মেয়র মুক্তারের সাথে রজন নামে তার এক সহযোগীকেও আটক করা হয়েছে।
রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখায়ের আলম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, মেয়রসহ আটক ব্যক্তিকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রাজশাহীতে আনা হয়েছে। তার বাড়িতে আরেক দফায় তল্লাশি চলছে। একই সাথে মেয়রের সহযোগী রজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তল্লাশি ও তদন্ত শেষে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে শিক্ষকের দায়ের করা মামলার পর মেয়রের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় তার বাড়ি তল্লাশি করে একটি অবৈধ বিদেশী পিস্তল, একটি ওয়ান শ্যুটার গান, দেশে তৈরি একটি বন্দুক, একটি এয়ার রাইফেল, শটগানের ২৬ রাউন্ড গুলি, পিস্তলের চারটি ম্যাগজিন, পিস্তলের ১৭ রাউন্ড গুলি, চারটি গুলির খোসা, ১০ গ্রাম গাঁজা, সাত পুরিয়া হেরোইন, ২০ পিস ইয়াবা, নগদ ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা এবং মেয়রের দুটি সই করা চেক জব্দ করে পুলিশ। চেকে টাকার পরিমাণ রয়েছে ১৮ লাখ।
এ সময় মেয়র মুক্তারের স্ত্রী জেসমিন আক্তার (৪০), ভাতিজা সোহান (২৫) ও শান্তকে (২৩) গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান মুক্তার আলী। গ্রেফতার সোহানের বাবার নাম নবাব আলী। আর গ্রেফতার শান্তর বাবার নাম সামিরুল।
উল্লেখ্য, মুক্তার আলী আড়ানী পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে তিনি দলীয় মনোনয়নেই মেয়র হয়েছিলেন। তারপর থেকেই ছিলেন বেপরোয়ো।
বুধবার দুপুরে রাজশাহীর এসপি এ বি এম মাসুদ হোসেন তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে পৌরসভার জয়বাংলা মোড়ে বাড়ি সংলগ্ন ওষুধের দোকানে বসেছিলেন মনোয়ার হোসেন মজনু। তিনি নাটোরের বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক।
গত পৌরসভা নির্বাচনে মনোয়ার হোসেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শহীদুজ্জামানের পক্ষে কাজ করেন। এ কারণে তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন মেয়র মুক্তার আলী। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে মেয়র নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তার দলবল নিয়ে গিয়ে কলেজ শিক্ষক মনোয়ার হোসেনের দোকানের সামনে গালিগালাজ শুরু করেন। এরপর মনোয়ার ও তার স্ত্রী এবং ছেলেকে মারধর করেন।
এ ঘটনায় রাতেই মনোয়ার হোসেন মেয়র মুক্তার আলী ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো: অঙ্কুরের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত তিন থেকে চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর এসপির নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো: আশরাফুল আলম, চারঘাট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের বিশেষ শাখার সহকারী পুলিশ সুপার রুবেল মাহমুদ ও বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম রাতেই মেয়র মুক্তারের বাড়িতে অভিযান চালান।
এ সময় তার বাড়ি থেকে অস্ত্র, মাদক, টাকা উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় মেয়রের স্ত্রীসহ তিনজনকে। আর পুলিশের উপস্থিতি টের ওই রাতে পালিয়ে যান মেয়র।
এসপি আরো জানিয়েছিলেন, জব্দ করা আগ্নেয়াস্ত্রগুলোর কোনো লাইসেন্স নেই। আর আগে থেকেই মেয়রের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা ছিল। সেগুলো মারামারির মামলা।
এসব মামলায় তিনি জামিনে ছিলেন। নতুন করে শিক্ষক মনোয়ার হোসেন একটি মামলা করেছেন। এ ছাড়া অস্ত্র, টাকা ও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে আরো তিনটি মামলা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।#