বিশেষ প্রতিনিধি, দূরবীণ নিউজ :
জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ‘অনভিপ্রেত ও রাজনৈতিক শালীনতা বিবর্জিত’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে গতকাল শনিবার( ৩ জুলাই) জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী শেসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব এইমন্তব্য করেন।
আজ ৪ জুলাই (রোববার) উত্তরার বাসা থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন,‘‘গতকাল সংসদে সংসদ নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার বক্তব্য অনভিপ্রেত এবং রাজনৈতিক শালীনতা বিবর্জিত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা রুচিহীন ও কল্পকাহিনী ছাড়া আরকিছুই নয়। সংসদ নেতা তার মনগড়া কল্পকাহিনীর মধ্য দিয়ে একজন মহান মুক্তিযোদ্ধা,গণতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী এবং জনগনের আস্থাভাজন প্রিয় নেতাকে হেয় প্রতিপন্ন করতেচেয়েছেন।”‘
“এই ধরনের বক্তব্য সংসদ নেতার কাছ থেকে জাতি আশা করে না। এটা সমস্ত জাতিকে হতাশ ও ক্ষুব্ধকরেছে। এই ধরনের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, সংসদনেতার এই ধরনের মন্তব্য খারাপ নজির স্থাপন করেছে।”
সংবাদ সম্মেলন গতকাল শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটিরসভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরা হয়।
সংসদে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুলইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সংসদে দেশনেত্রী বিদেশে চিকিৎসা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রীরঔদ্বত্যপূর্ণ শালীনতা বিবর্জিত বক্তব্যে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানানো হয়। সভা মনেকরে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সাজানোমিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রকৃত পক্ষে সাংবিধানিক এবং প্রচলিত আইনের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রেরআপোষহীন সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে তার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তার পাপ্য জামিন পর্যন্ত তাকে দেয়া হয়নি।
অথচএকই ধরনের মামলায় অন্যান্য প্রায় সকল অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া হয়েছে।”‘‘ দেশনেত্রীর পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে তার বাসভবনে সাময়িকভাবে স্থানান্তরের যে নির্দেশদেওয়া হয়েছে তা প্রশাসনিক নির্দেশ। আইনের কোথাও একথা বলা হয়নি যে, সরকার তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিতে পারবেন না।
মির্জা ফখরুল বলেন, যেখানে খুনের মামলায়, ফাঁসিরসাজাপ্রাপ্ত আসামী অথবা আজীবন মৃত্যুদন্নড প্রাপ্ত আসামী মুক্তি নিয়ে বিদেশে চলেযেতে পারে সেখানে এদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রেরর জন্য যিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন,জনগনের ভোটে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে নির্বাচিত তিন বার প্রধানমন্ত্রী ও দুইবারবিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন তাকে মানবিক কারনে চিকিতসার জন্য দেশের বাইরে উন্নতচিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া যাবে না-এটা কোনো মতেই গ্রহনযোগ্য হতে পারেনা।”
এক প্রশ্নেরজবাবে তিনি বলেন, ‘‘ সরকারের যে নির্দেশএবং যে আইনের বলে তারা নির্দেশ দিয়েছেন সেই নির্দেশে আবার তাকে নতুন নির্দেশেবিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে সরকার পারেন। আসলে তারা(সরকার) নিজেদের ক্ষমতানিজেরাই খর্ব করছে।এর একমাত্র উদ্দেশ্যে যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেএকটা বৈরী মনোভাব প্রদর্শন করা এবং দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলকভাবে এইব্যবস্থাটা তারা করেছেন।”‘‘
স্থায়ীকমিটির সভা মনে করে যে, সরকার নেতিবাচক মনোভাব থেকে বেরিয়ে এসে একজন মুক্তিযোদ্ধাও আজীবন সংগ্রামী বাংলাদেশের জনগনে প্রিয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশেরবাইরে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে সকল ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহনকরবেন।”
মির্জা ফখরুলবলেন, ‘‘ কোবিভ-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায়ব্যর্থতার জন্য এই অযোগ্য সরকারের অযোগ্যতা, দুর্নীতি এবং উদাসীনতা দায়ী। প্রায়১৫ মাস সময় নিযেও সমস্যাগুলো সমাধান করতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।”
‘‘ ২০২০ সালের মার্চ মাস হতে কোভিড-১৯ করোনার প্রাদুর্ভাবের ফলে সরকারের অপরিকল্পিত লকডাউন,সাধারণ ছুটি, সীমিত লকডাউন, কঠোর লকডাউনের ফলে প্রায় ২ কোটির ওপরে মানুষ দরিদ্রহয়েছে, কর্মচ্যুত হয়েছে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক। দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক ৮৫ শতাংশসংখ্যায় ৫ কোটিরও বেশি প্রকৃত অর্থে কর্মহীন।
অবিলম্বে দিন আনেক দিন খায়,অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, দোকান শ্রমিক, হকার, প্রান্তিক কৃষকদেরজন্য এক কালীন ১৫ হাজার টাকা প্রদানের আহবান জানাচ্ছি।”‘
দূর্গতদের পাশে দাঁড়ান’:
মির্জা ফখরুলবলেন, ‘‘ ক্রমাগত বর্ষণের ফলে এবং ভারতেরউজানে সকল বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে প্রায় ১০টি জেলায়নআকস্মিক ভাবে বন্যা পরিস্থিতিউদ্ভব হওয়ায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। অপরিকল্পিত ও দুর্বল নির্মাণ কাজের কারণে সড়ক ও বাঁধগুলো ভেঙ্গে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ব্যাপক ফসলহানী হওয়ায় কৃষকের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়েপড়েছে।”‘‘ বন্যা দুর্গতএলাকায় অবিলম্বে সরকারি ত্রাণ বিতরণ এবং বীজতলা ধবংস হয়ে যাওয়ায় নতুন বীজ সরবারহের দাবি জানাচ্ছি। দলের নেতা-কর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপদ্রুত এলাকায় দুর্গতদেরপাশে দাঁড়ানোর আহবানও জানাচ্ছি।”
‘এগুলো তাদের দিবাস্বপ্নের মতো’‘:
বিএনপি থেকে অনেকে তলে তলে আওয়ামী লীগে যোগাযোগ করছে’- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুলকাদেরের এরকম বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এগুলো তাদেরদিবাস্বপ্নের মতো। বিএনপিকে তার জন্মের পর থেকে বিশেষ করে তার প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউররহমানের শাহাদাতের পর থেকে বার বার চেষ্টা করা হয়েছে এই দলটিকে নিশ্চিহ্ন করবার, ভেঙ্গে ফেলবার, জনগনকে এই দলথেকে বিচ্ছিন্ন করবার।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রায় তিন বছর কারাগারে আটক রেখে এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসিত রেখে, আমাদের ৩৫ লক্ষ নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলা ও গায়েবী মামলা দিয়েবার বার চেষ্টা করা হয়েছে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা বিএনপিকে ভেঙ্গে ফেলতে পারেনি।”‘‘বিএনপি একটাবহমান বিশাল স্রোতস্বীনি নদী। এখান থেকে কখনো কখনো খড়কুটো এসে পড়ে, আবার খড়কুটোএসে চলে যায়। তাতে করে বিএনপির কোনো ক্ষতি হয়নি, ক্ষতি হয় না।
বিএনপি এদেশেরজনগনের দল, মূলত এটি জনগনের রাজনৈতিক রাজনীতি করে। আমি সবসময় বলি, ইটস এপ্ল্যাটফরম অব পিপলস। এখানে যারা এসেছে তারা মনে করে যে, বিএনপির যে রাজনীতি শহীদপ্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের যে রাজনীতি, যে দর্শন, সেইদর্শনকে সঙ্গে করে এই দলটি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যায় সামনের দিকে এবং সত্যিকার অর্থেই একটামুক্ত রাষ্ট্র নির্মাণ করে।”
/এডিজেড /একে / দূরবীণ নিউজ