বিশেষ প্রতিনিধি, দূরবীণ নিউজ:
প্রাণঘাতি করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ও বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসর্ম্পণ রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে এদেশে কৃষকরা। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই আজ বাংলাদেশ খাদ্যের ঘাটতি অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। যারফলে সরকার এবার প্রকৃত কৃষকদের মূল্যায়ন করে তাদেরকে
অগ্রাধিকার ভিত্তিক সহায়তার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে প্রকৃত কৃষকদের সহজ শর্তে আধুনিক কৃষিযন্ত্র ও অধিক ফলনশীল বীজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অবশেষে প্রকৃত কৃষকদের মূল্যায়ন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিে কৃষিতে প্রণোদনা দেওয়া শুরু করেছে সরকার। আর তারই ধারাবাহিকতায় কৃষির আধুনিক যন্ত্র কেনার জন্য মাঠ পর্যায়ের প্রকৃত কৃষককে সরকারি প্রণোদনার টাকা দেওয়া কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার।
এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে চেয়ারম্যান, উপজেল নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত সিলেকশন কমিটি প্রকৃত কৃষকদের যাচাই-বাছাই করে তালিকা তৈরি করবেন।
আরাে জানা যায়, দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও হাওর এলাকার কৃষকদের আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে শতকরা ৭০ ভাগ প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এই প্রণোদনার টাকায় কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ নিম্নমানের চীনা যন্ত্র কেনা যাবে না বলে মাঠ পর্যায়ে সতর্ক করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এদিকে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এই প্রতিনিধিকে বলেন, আধুনিক পদ্দতিতে জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে, জমি চাষ করা থেকে শুরু করে ফসল লাগানো, পাকা ফসল কাটা ও ফসল মাড়াই কাজে জাপানের দু’টিসহ মোট তিনটি কোম্পানির যন্ত্র কেনার নির্দেশনা দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
আরো কয়েকটি কোম্পানি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। যারা উন্নতমানের টেকসই মেশিন কৃষকদের দিতে পারবেন কেবলমাত্র তাঁদেরটাই ক্রয়ের জন্য বিবেচনা করা হতে পারে।
কৃষিমন্ত্রী উদাহরণ টেনে বলেন, যদি একটি আধুনিক কৃষিযন্ত্রের দাম ৩০ লাখ টাকা হয়, সেখানে অর্ধেক অর্থাৎ ১৫ লাখ টাকা সরাসরি প্রণোদনা হিসেবে সমতল এলাকার কৃষকদেরকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। তিনি আরো বলেন, আগামী পাঁচ বছরে দেশে বিভিন্ন ধরনের ৫৩ হাজার আধুনিক যন্ত্রপাতি কৃষকদের দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, তরে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মহামারি করোনার কারণে এবার চলতি অর্থ বছরে কৃষি খাতে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আয় হয়নি । তিনি বলেন, অন্য মন্ত্রণালয়ের বাজেট ১০ থেকে ৩০ ভাগ কাটছাঁট করা হলেও এবার বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ কমবে না। আগামী অর্থ বছরের বাজেটেও কৃষিখাতের জন্য প্রণোদনা ও সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আগামীতে দেশের কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের উন্নত মানের বীজ, ফলের চারা বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে ।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরে কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বরাদ্দ ছিলো ২২৫ কোটি টাকা। কৃষি মন্ত্রণালয় যার পুরোটাই খরচ করেছে। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে চলতি বাজেটে কৃষি যন্ত্রপাতি কেনায় ৬৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার।
সেই হিসাবে গত বছরের তুলনায় এবার কৃষি যন্ত্রপাতি কেনায় বরাদ্দ বাড়ছে ৪৫৫ কোটি টাকা। এছাড়া চলতি অর্থ বছরে কৃষিখাতে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। করোনার কারণে এই টাকা পুরোপুরি খরচ করা যায়নি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশে কৃষি উৎপাদন কোনো যাদুবলে বাড়েনি। সরকারের কৃষিনীতি কৃষকবান্ধব ও খাদ্য উৎপাদনমুখী। তাই ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সারের দামের ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছে।
মন্ত্রীর বলেন, ডিএপি সারের দাম বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ছিলো ৯০ টাকা কেজি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে করেছিলো ২৫ টাকা। ১২ বছরে এই সারের দাম বাড়ানো হয়নি। কৃষকের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সারে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে।
২০১৯ সালে ১৬ ডিসেম্বর থেকে ডিএপি সারের দাম ১৬ টাকা করা হয়েছে। অথচ ভারতের এই সারের দাম ৪৫ টাকা কেজি। আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।
/এডিজেড/ একে/ দূরবীণ নিউজ