বিশেষ প্রতিনিধি, দূরবীণ নিউজ :
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল, তবে সুস্থ হয়ে উঠেনি বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসক অধ্যাপক এএফএম সিদ্দিকী।
শনিবার( ১৯জুন) রাত সাড়ে ৮টায় এভার কেয়ার হাসপাতালে ৫৪দিন চিকিৎসা শেষে গুলশানের বাসায় ফিরোজায় ফিরেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেগম খালেদা জিয়া।
গুলশানের এই বাসা ফেরার পর এক সংবাদ ব্রিফিং এ তার চিকিৎসক টিমের প্রধান অধ্যাপক এএফএম সিদ্দিকী এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘‘ আলহামদুলিল্লাহ উনি(খালেদা জিয়া) স্থিতিশীল আছেন। তার মানে এই না যে, উনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছেন।”
‘‘ আমাদের মেডিকেল টিম যেটা এভারকেয়ার হাসপাতালে সুদক্ষ টিম আছে সেটা, দেশের বাইরে যারা আছেন এবং আমরা যারা আছি সবাই মিলে উনাকে নিবিড় পর্যবেক্ষনের রেখে চিকিৎসাটা আপাতত এখানে(বাসায়) রেখে চালিয়ে যাবো।”
ব্যাখ্যা করে অধ্যাপক এএফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ উনার অসুখটা চিকিৎসায় একটা স্থিতি অবস্থায় এসেছে। উনি কিউর হয়ে যাননি। উনার যেই হার্টের জটিলতা, কিডনির জটিলতা, লিভারের জটিলতা সেগুলো কোভিডের কারণে যে ভয়ংক আকার ধারণ করেছিলো সেই অবস্থার উত্তরন ঘটেছে। কিন্তু সেই অসুস্থতা গুলো রয়েই গেছে।”
‘‘ সেগুলোকে এডরেস করার যে চিকিৎসা এবং যে প্রস্তুতি বা প্রক্রিয়া সেইগুলো আমরা কিন্তু এখনো পরিপূর্ণভাবে করতে পারিনি। যার জন্য একটা রিস্ক উনার থেকেই যাচ্ছে। আমরা প্ল্যান করেছি যে, উনাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা করাব, উনি অবজারভেশনে আছেন। কিন্তু দুই সপ্তাহ বা তিন সপ্তাহ পরে আবার আমাদের অপশন রাখতে হচ্ছে যে, উনাকে হসপিটাল আবার নিয়ে রিভিউ করার প্রয়োজন হতে পারে।”এএফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ উনার যে জটিলতাগুলো আছে সেগুলো প্রাইমারি ডিজিজ। সেগুলোর চিকিৎসার জন্য আমরা মেডিকেল বোর্ড থেকে কতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেটা আমরা লিখিত আকারে উনারদের কাছে দেবো।”
খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা দেশে সম্ভব কিনা প্রশ্ন করা হলে এএফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ আমরা একটা লেভেল পর্যন্ত উনার চিকিৎসাটা চালিয়ে কতগুলো জটিলতা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।
কিন্তু কতগুলো বিষয় আছে যেমন উনার যে লিভারের সমস্যা আমরা ধরতে পেরেছি সেটা কোন স্টেইজে আছে এবং এমন সব সেন্টারে এসব অ্যাসেসমেন্ট হওয়া উচিত যেখানে আর্টিফিশিয়াল লিভার সাপোর্ট, আর্টিফিশিয়ালি অন্যান্য এডভান্স টেকনোলজি এ্যাপ্লাই করতে পারে।
অসুস্থতা কিন্তু শুধু লিভারে থাকে না, খাদ্যনালীতে হয় যেটা সমস্ত শরীরে তার প্রভাব ফেলে। যেটাতে মেজর কতগুলো কমপ্লিকেশন হতে পারে।”
‘‘ সেই ধরনের টেকনোলজি বা সেই ধরনের এডভান্স টিট্রমেন্ট সাপোর্ট আমাদের বাংলাদেশে নাই বলে আমরা মনে করছি। আমাদের লিখিত প্রতিবেদনে সেটা আমরা বলেছি।”
কেনো তাকে পরিপূর্ণ সুস্থতা ছাড়া বাসায় নিয়ে আসা হলো তার কারণ উল্লেখ করে তার চিকিৎসক টিমের প্রধান বলেন, ‘‘ হাসপাতালে রাখাটা অনেক রিস্ক বেশি হয়ে যাচ্ছিল সেজন্য বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। তিন বার উনার রক্তে ইনফেকশন হয়েছে। প্রত্যেকটা ইনফেকশন হাসপাতালের অর্গানিজমে। অর্থাৎ আমরা যখন ব্লাড কালচার করি সেই জীবানু দেখতে পাই, সেই জীবানুগুলো সহজে চিহ্নিত করা যায় এটা কোত্থেকে আসছে।”
‘‘ উনার যদি আবার একটা সিফসিস হয় তাহলে উনাকে এতটুকু অবস্থায়…। আপনারা শুনেছেন যে বুকে দুইটা চেস্ট টিউব নিয়ে ২৪ ঘন্টা উনার পাশে দুইটা ব্যাগ লাগানো সেখানে উনি দেখতে পারছে হেমোরেজ, রক্ত আসছে। উনি নিজে চোখের সামনে দেখতে পারছেন।সেগুলো নিয়ে উনি ১৮/১৯দিন কাটিয়েছেন।
আল্লাহর রহমত উনি খুব দৃঢ়তার সাথে আমরা যেভাবে উনাকে বলেছি উনি সেভাবে আমাদের সাথে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। সেজন্য চিকিৎসাটা এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে।”
খালেদা জিয়ার লিভারে অবস্থা সম্পর্কে অধ্যাপক এএফএম সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ উনার আগের যে অসুস্থতা ছিলো তার সাথে আমরা বিশেষ করে দেখেছি যে, লিভারের যে সমস্যাটা সেটা হচ্ছে ডি-কম্পোসেটেড লিভারের ফাংশনটা মাঝে মাঝে কম্প্রোমাইজ হয়ে যায়।
তখন উনার এলবুমিন সিনথেসিস হয় এবং উনার কিডনি দিয়ে এলবুমিন বেশি বের হয়ে যায়। এই দুইটা কারণে উনার রক্তে এলবুমিন কমে যায়। আর লিভারের জটিলতার একটা অংশ হিসেবে উনার মাঝে মাঝে খাদ্যনালীতে মাক্রোস্পেসেফিক… যার জন্য উনার হিমোগ্লোবিন কমে যায়।”
বিদেশে নিয়ে যাওয়া জরুরী কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,‘‘ উনার হার্টের কিছু কিছু টিট্রমেন্ট এ এডভান্সমেন্ট আমাদের দেশে আছে। কিডনি ট্রিটমেন্টের ওই ধরনের এডভান্সমেন্ট এখানে নেই, কিছু কিছু ম্যানেজ করা যায়।”
‘‘কিন্তু লিভারের সমস্যা হয়ে যখন ডিকম্পো্নসেশন হয়, সেই সমস্যার সার্বিক মূল্যায়ন করে স্টেটেজিং করে সেইগুলোর আনুসাঙ্গিক যে চিকিৎসা দরকার সেই টোটাল ট্রিটমেন্ট এবং সাপোর্ট আমাদের দেশে নাই।”
এই সময়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর,চিকিৎসক টিমের সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ডা. মোহাম্মদ আল মামুন, চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা পজেটিভ শনাক্ত হওয়ার পর প্রখ্যাত ‘বক্ষব্যাথি ও মেডিসিন’ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকীরে নেতৃত্বে ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিম গুলশানের বাসায় তার চিকিৎসা শুরু হয়।
৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুদকের করা দুর্নীতির দুই মামলায় দন্ডিত। দন্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়; শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। তখন থেকে তিনি গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা নেন।
/এডিজেড/একে/ দূরবীণ নিউজ