বিশেষ প্রতিনিধি, দূরবীন নিউজ :
পরিবেশ উন্নয়নে বৃক্ষরোপনের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবে বিএনপি। আজ ১৭ জুন ( বৃহস্পতিবার) দুপুরে বৃক্ষরোপনের কর্মসূচির উদ্বোধনকালে দলের এই অবস্থানের কথা ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন,আমাদের বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশকে সুন্দর রাখতে হবে। সেজন্য অন্যতম প্রধান হচ্ছে গাছ। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য এই বৃক্ষরোপনকে সামাজিক আন্দোলন মনে মানুষকে উদ্ভুব্ধ করতে হবে।
আমাদের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সারাদেশে বৃক্ষরোপনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এরপর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে সবর্ত্র সামাজিক বনায়নের কাজ শুরু হয়েছিলো। সেজন্য আমরা আবারও নতুন করে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশে সারাদেশে এই বৃক্ষায়নের কর্মসূচি শুরু করেছি। এটাকে আমরা একটা সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে চাই।
পরিবেশ ও জলাবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় বাজেটে সরকারের বরাদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ যারা একটু খবরের কাগজ বা বইপত্রের দিকে খেয়াল রাখেন পরিবেশ উন্নয়নের জন্য এই সরকার কত পারসেন্ট জিডিপির বরাদ্ধ রেখেছে সেটা কী আপনারা বলতে পারবেন? খুব সামান্য।অথচ আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পরিবেশ উন্নয়নের অনেক বেশি বরাদ্ধ করেছিলেন। সমস্ত উপকুলবর্তী এলাকায় গাছ লাগানোর জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ করেছিলেন সেখানে গাছ লাগানোর কাজ শুরু হয়েছিলো। সব জায়গায় সামাজিক বনায়নের কাজ শুরু হয়েছিলো।
বৃক্ষরোপনের কর্মসূচির আওতায় এবার সারাদেশে ৫ লক্ষ নিম গাছের চারা রোপনের ঘোষণা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আসুন এই বৃক্ষরোপনের মধ্য দিয়ে আমরা একটা নতুন যুদ্ধ শুরু করি। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রকৃতিকে বাঁচানোর জন্য, পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য এবং আমাদের ভবিষ্যত বংশধরকে বাঁচানোর জন্য আমার মনে হয় যে, আমরা সবাই যদি ৫টা করে গাছ লাগাই তাহলে আমরা অনেক বেশি এগিয়ে যেতে পারবো।
জেলা শহরের পুরোনা গাছ কর্তন:
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে একদিকে মানুষের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে, গণতন্ত্রকে ধবংস করেছে অন্যদিকে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করেছে। তারা ক্ষমতায় আসার পরে বড় বড় রাস্তার দুই ধারে যে পুরনো গাছগুলো ছিলো সেগুলোর একটাও নাই।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, আমাদের ঠাকুগাঁও শহরে ঢুকতেই একটা সেগুন বাগান ছিলো। একটা খালের পাশ দিয়ে অনেক সেগুনের গাছ লাগিয়েছিলেন একজন ডিএফও পাকিস্তান আমলে। এখন প্রায় সাফ করে ফেলেছে আওয়ামী লীগ আসার পর থেকে। সত্যিকথা বলতে কী ওই জায়গাটা এখন দেখলে এতো খারাপ লাগে। আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে এদেশের প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে, পরিবেশ ধবংস করেছে এবং একই সঙ্গে রাজনীতির পরিবেশকেও ধ্বংস করছে। সত্যিকার অর্থে তারা মানুষকে চরম বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
তুরাগসহ বিভিন্ন নদী দখল,:
ঢাকার আশপাশের নদীগুলো ভরাট করে দখল করার জন্য ক্ষমতাসীনদেরও দায়ী করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা খবরের কাগজ দেখেন, টেলিভিশনের দেখেন, এই যে আপনারাদের তুরাগ নদী সব দখল হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন খবরের কাগজে আমরা দেখি। কারা দখল করছে? সমস্ত আওয়ামী লীগের নেতারা দখল করছে। কারা সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করছে, কারা পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করছে? কারা ক্লাব তৈরি করছে? সব আওয়ামী লীগের লোকজন, এমপি। কারা সিমেন্ট কারখানা তৈরি করছে ?
পাশে চারদিকে(বালু নদী) তাঁকিয়ে দেখবেন এখান থেকে সেই রুপগঞ্জ পর্যন্ত সব দখল করেছে আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী-এমপিরা। এ্ভাবে দখল করে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে একটা বিরুপ প্রকৃতি তৈরি করেছে যেটা নিয়ে আমাদের বেঁচে থাকা বড় কষ্টকর।
হাজার হাজার কোটি টাকা পাঁচার:
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের লোকেরা হাজার হাজার কোটি টাকা পাঁচার করে বিদেশে নিয়ে গেছে, যাচ্ছে। গত ৫/৬ বছরের মধ্যে প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকা পাঁচার হয়ে গেছে।
করোনা পরিস্থিতির তুলে ধরে তিনি বলেন , এখন সময়টা খুব খারাপ। আমাদেরকে দুইটা দাণবের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। একটা হচ্ছে অদৃশ্য দাণব করোনাভাইরাস। সারাদেশে এই সংক্রামণ পরিস্থিতি খুবই খারাপ। দেখেন এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা কিভাবে উদাসিনতার মধ্য দিয়ে, দুর্নীতির মধ্য দিয়ে মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে ফেলেছে।
আমরা দেখছি, এই করোনা নিয়েও তারা ব্যবসা করে। টেস্ট নিয়ে ব্যবসা করে, হাসপাতালের বেড নিয়ে ব্যবসা করে, হাসপাতাল নিয়ে ব্যবসা করে, এখানে তিনশত ফিটের কাছে একটা হাসপাতালই তারা উদাও করে দিয়েছে। এভাবে আজকে তারা(সরকার) দেশে দুর্নীতির মহোতসব শুরু করেছে, সেই মহোতসবে মানুষের যে ন্যায় সঙ্গত অধিকার তাকে তারা ধবংস করে দিচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪২ নং ওয়ার্ডে বেরাইদ এলাকায় বিএনপি মহানগর উত্তরের উদ্যোগে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপন কর্মসূচির উদ্বোধন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
বেরাইদে একটি নিম গাছের চারা রোপন এবং স্থানীয় নেতাদের মধ্যে নিম গাছের চারা বিতরণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মহাসচিব। বিএনপি এই কর্মসূচির আওতায় সারা দেশে ৫ লাখ নিম গাছের চারা বপন করবে। ঢাকা মহানগর উত্তরের
নেতবৃন্দ জানান, তারা উত্তরের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের ১০ হাজার নিম গাছ বপন করবে। মহানগর উত্তরের সিনিয়র সহসভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এএফএম আবদুল আলীম নকির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সহ-সম্পাদক রওনাকুল ইসলাম টিপু, যুব দলের উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর মহানগর উত্তরের এজিএম শামসুল হক, তুহিরুল ইসলাম তুহিন, এবিএমএ আবদুর রাজ্জাক প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
/এডিজেড/একে/ দূরবীন নিউজ