দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
কৌশলে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস ভাড়া করে গাড়ি ছিনতাই বিক্রি করে দেয়া চক্র বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভাড়া নেয়া প্রাইভেটকার নিয়ে সুবিধাজনক স্থানে গিয়ে ড্রাইভারের হাত-পা বেঁধে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে ভেগে যেতো চক্রটি। দীর্ঘদিন ধরে এমন কাজ করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও অবশেষে গোয়েন্দার হাতে গ্রেফতার হয়েছে চক্রটি।
শনিবার (৫ জুন) দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, ‘একটি ডাকাতির মামলার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে এ চক্রটির সন্ধান মিলেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার মাধ্যমে প্রাইভেটকার চুরি করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। অন্য মামলার তদন্তে তাদের চক্রের সদস্য হাবীব মিয়াকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য বেরিয়ে আসে।’
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘উত্তরা পূর্ব থানায় ডাকাতির মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে একটি চক্র আছে যারা কৌশলে প্রাইভেটকার ভাগিয়ে নিয়ে অল্প দামে বিদেশ থেকে দেশে কয়েক মাসের জন্য ঘুরতে আসা প্রবাসীদের কাছে ওই সব গাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছে।
এমন তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে হাবীব মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল নরসিংদী ও কুমিল্লা জেলার একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।’
গ্রেফতারকৃতরা হলেন-মীর মিজান মিয়া, মো. হাবিব মিয়া, মো. ফারুক, কামাল মিয়া, মো. আল আমিন ও মোবারক। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করে ডিবি।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথামিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘গত ২১ এপ্রিল গ্রেফতার হাবিব মিয়া তার বিদেশফেরত এক আত্মীয়কে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে আনার কথা বলে কিশোরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে একটি হায়েস মাইক্রোবাস ভাড়া করেন।
পরদিন ২২ এপ্রিল আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মাইক্রোবাসচালক মো. আবুল বাশার গ্রেফতার হাবিবের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী করিমগঞ্জ থানা এলাকা থেকে চারজন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। ওই দিন রাতে আনুমানিক ১১টায় তাদের বহনকৃত মাইক্রোবাসটি ঢাকার আব্দুল্লাহপুরে পৌঁছলে অজ্ঞাতনামা যাত্রীবেশে গ্রেফতাকৃতরা লুঙ্গি, গামছা ও দড়ি দিয়ে চালকের হাত-পা বেঁধে মাইক্রোবাসের নিয়ন্ত্রণ তারা নিয়ে নেন।’
‘এরপর গ্রেফতার ফারুক মাইক্রোবাসটি চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার গাউছিয়া নরিকান্দী রোডে নিয়ে যাযন। এরপর চালক আবুল বাশারকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে সোনারগাঁয়ের দিকে চলে যাযন।
পরে গ্রেফতার হাবিব গাড়িটি চালিয়ে কুমিল্লার চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিয়ে গিয়ে সেখানে অবস্থানরত গ্রেফতার মিজানের কাছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। এরপর গ্রেফতার মিজান ভুয়া নম্বর প্লেট ও কাগজপত্র সংগ্রহ করে কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ার বিনিময়ে ওই গাড়িটি চালাতেন।’
তিনি বলেন, ‘এই চক্রটি এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ গাড়ি চুরি করেছে তার তদন্ত চলছে। তবে তারা জানিয়েছেন তাদের ছিনতাইকৃত প্রাইভেটকারগুলো সিলেটে বেশি বিক্রি করেছেন। কারণ সিলেটে অনেক প্রবাসী আসেন কয়েক মাসের জন্য। ওই প্রবাসীরা কয়েক মাসের জন্য অল্প দামে গাড়ি কিনতে চান।
আর এ চক্রটিও ওই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছিল। তবে প্রবাসীরা গাড়ি কেনার সময় বুঝতে পারেন না গাড়ি চুরি করা কি-না। যদিও পরবর্তীতে ফেঁসে যাচ্ছেন তারাই। তাই গাড়ি কেনার আগে অবশ্যই বিআরটিএর অনুমোদন আছে কি-না এবং গাড়িটির মূল মালিক কে- সেগুলো যাছাই-বাছাই করার অনুরোধ করছি ‘
ডিবি প্রধান আরও বলেন, ‘এ চক্রটি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের কাছ থেকে অব্যবহৃত সিম কিনে ব্যবহার করতো। তারা মনে করতো সেসব সিম ব্যবহার করলে তাদেরকে ধরা যাবে না। তাই নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম অন্যকে না দেয়ার অনুরোধ জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।’#