দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা ও অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধে এবং মূল নকশায় সোহরাওয়ার্দীর মাস্টারপ্ল্যান ঠিক রাখার জন্য বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা ও সমমনা বেসরকারি ছয় সংগঠন ও এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে করা রিটের শুনানি চার সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট।
আজ বৃহস্পতিবার (২০ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চে ছয় প্রতিষ্ঠান ও এক ব্যক্তির করা রিটের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
উচ্চ আদালত বলেছেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিয়ে জারি করা আদেশ প্রতিপালন করতে হবে। আর এই মাথায় রেখেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরবর্তী কার্যক্রম করতে হবে। উচ্চ আদালত পরিবেশের বিষয়টি নজরে রাখবেন।’
রিটে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, গণপূর্ত বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার মো. শামিম আখতার এবং চিফ আর্কিটেক্ট অব বাংলাদেশ মীর মনজুর রহমানকে বিবাদী করা হয়।
এর আগে শতবর্ষী গাছ না কাটার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তিনি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট তিনজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দাবিতে রিট করেন।
গণমাধ্যমে আদালতের এমন মনোভাবের বিষয়টি নিশ্চিত করেন রিটকারীপক্ষের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এদিকে মন্ত্রণালয় থেকে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন ও পরিবেশবিদদের সঙ্গে কথা বলে সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা ও অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন শুনানিতে অংশ নেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে, তারা পরিবেশ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। এরপর তারা ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গাছ না কাটা এবং ৭ মার্চের ভাষণের আদলে অবকাঠামো নির্মাণসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তার সঙ্গে ছিলেন- আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ কবীর। এছাড়া সিনিয়র আইনজীবী ফিদা এম কামাল শুনানিতে যুক্ত ছিলেন।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এএম আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন- অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী।
এর আগে গত ৯ মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা ও অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন করা হয়।
একইসঙ্গে রিটে মূল নকশার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ স্থাপনা উচ্ছেদ, উদ্যান সংরক্ষণ এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে মূলরূপে রাখার নির্দেশনা চাওয়া হয়। মূল নকশায় সোহরাওয়ার্দীর যে মাস্টারপ্ল্যান রয়েছে, তা ঠিক রাখার আর্জি জানানো হয়।
জানতে চাইলে বেলার আইন সমন্বয়কারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ কবীর জাগো নিউজকে বলেন, এ বিষয়ে আদালতের নির্ধারিত দিন ১৯ মে (বুধবার) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ভার্চুয়াল বেঞ্চে এ রিট আবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বুধবার রিটটি কোর্টের কার্যতালিকায় সর্বশেষ দিকে ছিল। তাই শুনানিতে না উঠলেও আজ (২০ মে) শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
রিট আবেদনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণের (তৃতীয় প্রকল্প) নামে পুরোনো ও ঐতিহাসিক গাছ কেটে প্রকল্প নির্মাণ কেন অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, মূল নকশার বাইরে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, এরই মধ্যে যেসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে তা কেন অপসারণের নির্দেশ দেয়া হবে না এবং ঢাকা মহানগরের মাস্টারপ্ল্যান যেভাবে রয়েছে সেভাবে উদ্যান সংরক্ষণ করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়।
একইসঙ্গে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের জন্য গাছ কাটা বন্ধ রাখার নির্দেশনা চাওয়া হয়। পাশাপাশি যেসব গাছ কাটা হয়েছে তার পরিবর্তে তিন গুণ গাছ লাগানোর নির্দেশনা চাওয়া হয়।
এর আগে এসব বিষয় নিয়ে গত ৬ মে পাঠানো আইনি লিগ্যাল নোটিশের পরও কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় রিট আবেদন করা হয় বলে জানান রিট আবেদনকারী পক্ষ।
রিট আবেদনকারীরা হলো- বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।
রিটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান বন সংরক্ষক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে বিবাদী করা হয়।
রিটে বলা হয়, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শতবর্ষী পুরোনো গাছ কেটে বিলুপ্তপ্রায় পাখির আশ্রয়স্থল ও আবাসের স্থান ধ্বংস করে বায়ুদূষণের শীর্ষে থাকা মহানগরকে আরও নাজুক অবস্থায় ফেলা হচ্ছে।
আবেদনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পিত এবং গণপূর্ত অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। উপরন্তু উদ্যানের সবুজকে ধ্বংস করা ও তার শ্রেণি পরিবর্তনের শামিল, যা ২০০০ সালের ৩৬ নম্বর আইনের (জলাধার সংরক্ষণ আইন) পরিপন্থী।
একই আইন অনুযায়ী উদ্যান হিসেবে চিহ্নিত ও ব্যবহৃত কোনো ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না বা হস্তান্তরও করা যাবে না। এরই মধ্যে যতটুকু নির্মাণকাজ করা হয়েছে তা হাইকোর্টের রায়ের পরিপন্থী।
এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কাটা বন্ধে আইনি নোটিশের পর আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদনও করেছিলেন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
#