দূরবীণ নিউজ ডেস্ক:
চলমান লকডাউনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নানা শ্রেনি ও পেশার লোকজনের সঙ্গে রাস্তায় পুলিশ সদস্য এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রায় বাকবিতন্ডার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রশাসন একটু কৌশলী ও মানবিক আচরণ করলে এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। কারণ এই লকডাউনেও পোশক কারখানা, সারাদেশে কাঁচাবাজারসহ পাড়ায় মহল্লায় দোকান পাঠ খোলা রয়েছে। আর অতিপ্রয়োজনেই লোকজন বাসা থেকে বের হন।
দেশের পেশাজীবী ও দায়িত্ববানদের তো জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বাসা থেকে কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। এরমধ্যে যদি রাস্তায় রাস্তায় প্রশাসনের লোকজনের দ্বারা হেনস্থা হবার খবর পাওয়া যাচ্ছে। আর এসব ঘটনায় চিকিৎসকসহ বিশেষ পেশার লোকজন জনগণের দুর্ভোগ লাগবে স্ব স্ব অবস্থান থেকে কাজ করছেন। ফলে সবারই উচিত সহনীয় আচরণ করা।
গত ১৮ এপ্রিল একজন চিকিৎসক ও প্রশাসনের লোকজনের মধ্যকার ঘটনার বাকবিতন্ডার ঘটনাটি অবশেষে হাইকোর্টে চলে গেছে। হাইকোর্টেও প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আর মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে চিকিৎসদের সংগঠন এবং পুলিশ প্রশাসনের সংগঠন। এটা কোনভাবেই শুভ লক্ষণ নয়।
নিম্মে এক একজন চিকিৎসক ও প্রশাসনের লোকজনের মধ্যকার ঘটনা ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর :
নগরীর এলিফ্যান্ট রোডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনির সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যদের বাগবিতণ্ডার ঘটনায় তার বিচার চেয়ে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন যে বক্তব্য দিয়েছে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিজ (এফডিএসআর)।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় অনলাইলে আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলন থেকে এই দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে এফডিএসআরের চেয়ারম্যান ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন বলেন, পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সত্যকে খণ্ডিত করে উপস্থাপন করছে। তারা সকল কিছুর জন্য ডা. জেনিকে দায়ী করেছেন। অথচ একজন নারী চিকিৎসককে একা পেয়ে কতিপয় পুলিশ সদস্য এক রকম উত্যক্ত করেছে।
ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, এই ঘটনা সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হয়েছে। পুলিশ বাহিনী ও চিকিৎসকদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে সরকারকেই বিপদে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে। এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা উচিত।
সংগঠনটির চেয়ারম্যান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সারা পৃথিবীতে যেখানে ডাক্তারদের বিশেষভাবে সম্মানিত করা হচ্ছে, সেখানে শুরু থেকে আমরা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হয়েছি। শুরুতে নকল মাস্ক সরবরাহ করে আমাদের মৃত্যুর সামনে দাঁড় করানো হয়।
একসময় কর্তব্যরত চিকিৎসকদের জন্য আবাসন ও যানবাহনের ব্যবস্থা করা হলেও তা আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রণোদনা ও স্বাস্থ্যবিমার কথা বলা হলেও তার বাস্তবায়ন বলতে কিছুই হয়নি। এমন প্রতিকূলতার মুখেও আমরা জীবনবাজি রেখে কোভিড রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এর বিনিময়ে সম্মান বা স্বীকৃতি তো দূরের কথা, পদে পদে অপমানিত হচ্ছি।
চলমান বিধিনিষেধে চিকিৎসকদের চলাচলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, গত ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের প্রথম দিনেই প্রচুর সংখ্যক চিকিৎসক ডিউটিতে যাওয়ার পথে একাধিক স্থানে পুলিশের হেনস্তার শিকার হন।
এমন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এফডিএসআরের পক্ষ থেকে প্রতিবাদের পাশাপাশি আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের হয়রানি বন্ধের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতরের পক্ষ থেকেও সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করা হয়।
এরপর এ ধরনের হয়রানির সংখ্যা কমলেও লকডাউনের পঞ্চম দিনে ১৮ এপ্রিল আমরা দেখলাম, হাসপাতাল থেকে ডিউটি শেষে ফেরার পথে এলিফ্যান্ট রোডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনি একদল পুলিশ কর্তৃক হেনস্তার শিকার হয়েছেন। ইতোমধ্যে ওই ঘটনার আংশিক ধারণকৃত ভিডিও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করা হয়েছে।
যা বলছে বিএসএমএমইউ:
ডা. সাঈদা শওকত দায়িত্ব পালন শেষে অত্র প্রতিষ্ঠানের লোগো সম্বলিত গাড়িতে আরোহিত অবস্থায় এলিফ্যান্ট রোডে পৌঁছার পর কর্তব্যরত পুলিশের টহল দল কর্তৃক তাকে থামানো হয়। পরিচয় চাওয়া হলে তিনি তার চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত পরিচয় জানান।
পক্ষান্তরে, উক্ত টহলদল কর্তৃক তাঁর চিকিৎসক পরিচিতিকে ‘ভুয়া’ বলা হয় এবং অসৌজন্যমূলকভাবে তাকে গাড়ি থেকে নামতে বলা হয়। উক্ত সময় তিনি তার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সম্বলিত অ্যাপ্রন পরিহিত অবস্থায় ছিলেন।
অ্যাপ্রন বিশ্বব্যাপী চিকিৎসকগণের পরিধেয় পেশাগত পোশাক হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ তাকে ভুয়া চিকিৎসক হিসাবে অভিহিত করেন। এর প্রেক্ষিতে ডা. সাঈদা শওকত বিক্ষুব্ধ হন এবং পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হন, যার খণ্ডকালীন সচিত্র প্রতিবেদন সামাজিক মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে।
এদিকে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন:
পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই চিকিৎসক কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ‘অপেশাদার এবং অপমানজনক’ আচরণ করেছেন। এছাড়া তিনি পুলিশ সদস্যদের ‘হারামজাদা’ বলে গালি দিয়েছেন এবং নানাভাবে হুমকিও দিয়েছেন।
এমন আচরণ এবং নিয়ম ভঙ্গের কারণে ওই চিকিৎসকের বিচার দাবি করেছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
#