দূরবীণ নিউজ ডেস্ক:
লকডাউনে বিনা প্রয়োজনে অযথা গাড়ি কিংবা মটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় নামলেই জরিমানা দিতে হবে, কোনো মাফ নেই।
রাজধানীর প্রগতি সরণির চেকপোস্টে কুড়িলের দিক থেকে আসা একটি প্রাইভেট কারকে থামতে সিগন্যাল দেন কর্তব্যরত পুলিশ। চালকের সিটে হাফ প্যান্ট পরা গাড়িটির মালিক। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা প্রশ্ন, কোথায় যাচ্ছেন? উত্তরে গাড়ির মালিক বললেন, ব্যাংকে গিয়েছিলাম।
অপর পুলিশ সদস্যের প্রশ্ন, হাফ প্যান্ট পরে ব্যাংকে ক্যান? উত্তর সন্তোষজনক না হওয়ায় ওই প্রাইভেট কার মালিককে খেতে হলো মামলা। শুধু মোটরসাইকেল চালক ও প্রাইভেট কার চালকই নয়, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বেরুলেই মামলা ও জরিমানা গুনতে হচ্ছে অনেককে। অনেকে আবার অভিযোগ করেছেন, তাদের কাছে মুভমেন্ট পাস থাকার পরেও পুলিশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।
দেশে মহামারী করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বুধবার থেকে এক সপ্তাহের লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে অনেককেই নানা অজুহাতে ঘরের বাইরে বের হতে দেখা গেছে।
ফলে গতকাল শাহবাগে লকডাউন নিশ্চিতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হওয়া মানুষকে জরিমানাসহ শাস্তি নিশ্চিত করেছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর নেতৃত্বে ছিলেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। এ ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ তৎপর ছিল।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত শাহবাগে চেকপোস্ট বসিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় ১৫টি যানবাহনকে মামলা করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে নগদ সাত হাজার টাকা। এ ছাড়া সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জনসাধারণকে ২৫০টি মাস্ক বিতরণ করে র্যাব।
বৃহস্পতিবার শাহবাগে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, র্যাব-৩-এর সদস্যরা রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হওয়া অনেককে থামিয়ে বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চান। যারা মুভমেন্ট পাস দেখাচ্ছেন কিংবা যৌক্তিক ও জরুরি প্রয়োজনের কথা জানাচ্ছেন তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
তবে সাধারণ প্রয়োজনকে জরুরি প্রয়োজন হিসেবে উপস্থাপন করলেই পড়তে হচ্ছে জরিমানার মুখে। গাড়ি ছাড়াও হেঁটে স্বাস্থ্যবিধি না মানা বা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলে তারাও পড়ছেন জরিমানার মুখে। মুভমেন্ট পাস ছাড়া বের হলেই ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পলাশ কুমার বসু বলেন, জনগণ এখনো সচেতন হচ্ছে না। আমরা সচেতন করানোর চেষ্টা করছি।
সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারের নির্দেশনায় লকডাউন চলছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য আমরা মাঠে রয়েছি। তিনি বলেন, যারা সরকারি নির্দেশনা মানছেন না আমরা তাদের পেনাল কোডের সংক্রামক রোগ ছড়ানোর ধারা ও অবহেলাজনিত ধারায় মামলা ও জরিমানা করছি। অপরাধ অনুযায়ী জরিমানা করা হচ্ছে। তবে আমরা সচেতনতার ওপর বেশি নজর রাখছি।
প্রগতি সরণির কোকা-কোলা মোড়ে মামলা খাওয়া প্রাইভেট কার চালক আকরাম উদ্দিন জানান, গাড়িটির মালিক তিনি। বন্ধুকে ব্যাংকে নামিয়ে দিতে গিয়েছিলেন তিনি। ফেরার পথে চেকপোস্টে তার গাড়িটি থামানো হয়।
থামিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা বললেন, আপনি জানেন না এ সময় অপ্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া যাবে না। উত্তরে আমি বললাম, কাজেই তো বের হয়েছি। বন্ধুকে ব্যাংকে নামিয়ে দিয়ে আসলাম। কিন্তু চেকপোস্ট থেকে ছাড়া পাননি। মামলা দিয়ে দিলো কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ।
ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আসাদ সাংবাদিকদের বলেন, অকারণে বাইরে বের হওয়ার কারণে গাড়ির চালক আকরাম উদ্দিনকে জরিমানা করা হয়েছে। সরকারি আদেশ অমান্য করে বাইরে বের হওয়ায় তাকে তিন হাজার টাকার মামলা দেয়া হয়েছে।
র্যাব-৩-এর এক কর্মকর্তা জানান, শাহবাগ মোড়ে একটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির গাড়ি আটকায় রথ্যাব। গাড়ির স্টিকারে লেখা ‘জরুরি ওষুধ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত’। গাড়ির গ্লাস নামিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট দেখলেন গাড়ির ভেতরে কয়েকটি কার্টন। কিসের কার্টন জানতে চাইলে চালক জানালেন, খেজুরের বক্স।
ডাক্তারদের গিফট করার জন্য কোম্পানি থেকে পাঠানো হয়েছে। কাজটি জরুরি না হওয়ায় ওই চালক জাহাঙ্গীরকে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন রথ্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ ছাড়া মাস্ক খুলে রিকশায় শাহবাগ থেকে হাতিরপুলের দিকে যাওয়া কাস্টম কর্মকর্তা মানু মণ্ডলকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ৫০০ টাকার জরিমানা দিয়ে তমা ট্যাক্সি চালক নুরুল হক বলেন, পাশের বাসার একজনের মেয়েকে হাসপাতাল থেকে আজ রিলিজ দেয়া হবে। তাকে আনতে যাওয়ার সময় আমাকে জরিমানা করা হলো। এ দিকে মাস্ক না থাকায় রবিন আহমেদ নামে এক সিএনজি চালককে ৩০০ টাকা জরিমানা করা হয় শাহবাগ মোড়ে। #