দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
বিদেশে প্রায় ৩ হাজার কোটা টাকা পাচারের ঘটনায় আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম ও সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীসহ ৮জনের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আলোচিত ৮ জন হলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম, তার দুই স্ত্রী শাহীন আক্তার শেলী ও নাসরিন বেগম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সীতাংশু কুমার সুর চৌধুরী (এস কে সুর চৌধুরী), তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফসিএল) এভিপি আল মামুন, পিপলস লিজিংয়ের ম্যানেজার (ট্রেজারি) অভীক সিনহা ও ঢাকার শান্তিনগরের বাসিন্দা অতসী মৃধা।
তবে এস কে সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে আগেই হাইকোর্টের আদেশে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তার পরও আবার নিষেধাজ্ঞার চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল ) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে উপ পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের স্বাক্ষরে পুলিশের ইমিগ্রেশন শাখায় পাঠানো চিঠিতে ওই ৮জনের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে।
দুদক উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। তারা দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন। এমতা অবস্থা প্রাপ্ত অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে ।
জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারি পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদারসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। ওইসময় প্রয়াত সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়ে ড. নাশিদ কামালসহ পাঁচজন বিনিয়োগকারীর করা আবেদনে হাইকোর্ট ওই ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
আদালত যাতে দেশ থেকে পালাতে না পারেন বা দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দেন।
ইতোমধ্যে দুদক পি কে হালদারের ঘনিষ্ট ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে। এরমধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পিকে হালদারের সহযোগী শংখ বেপারী, রাশেদুল হক ও সর্বশেষ অবন্তিকা বড়াল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আরো জানা যায়, গত বছরের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট ২০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ছিলেন। ওই আদেশে উল্লেখিতদের মধ্যে লীলাবতী হালদার, অভিজিৎ চৌধুরী, অমিতাভ অধিকারী, উজ্জ্বল কুমার নন্দী ও ইরফান উদ্দিন আহমেদের নামও ছিল।
এই চার কোম্পানি হলো- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অংকের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেন।
ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে দুদক। গত ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করে ইন্টারপোল।
অর্থ পাচারের মামলা মাথায় নিয়ে ২০১৯ সালে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশ ছাড়েন পি কে হালদার; যদিও পি কে হালদার যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন সে অনুরোধ জানিয়ে পুলিশের বিশেষ শাখাকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তবে চিঠি পৌঁছানোর দুই ঘণ্টা ৯ মিনিট আগেই ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশ ত্যাগ করেন পি কে হালদার। #