দূরবীণ নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিটি করপোরেশনসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগে নানা অনিযম, দুর্নীতি এবং লোপাট বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম গত মার্চে সপ্তাহ ব্যাপী মশক নিধনে বিশেষ অভিযানকালে আক্ষেপ করে বলেছেন, ১২ শত মশক কর্মীর মধ্যে একটা বড় অংশকে পাওয়া যায় না। তিনি উত্তরায় গত ১৬ মার্চ মশক কর্মীদের বায়োমেট্রিক পদ্দতিতে হাজিরা উদ্বোধন করেন। আর এসব মশক কর্মীদের মধ্যে বেশিরভাগই আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া। তারা ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন।
এছাড়া সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আউটসোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগের নামে নানা ফাঁক ফোকড়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন মধ্যস্বত্ত্ব ভোগী (ঠিকাদার)।
এসব বিষয় নিয়ে কেই কথা বলতে চায় না, কারণ রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহারকারী ঠিকাদারদের কাছে সরকারি দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অনেকটা জিম্মি ।
জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে সরকারি দপ্তরে আউটসোর্সিংয়ের জনবল নিয়োগে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী অনিময় ও দুর্নীতি দূর করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সব মন্ত্রণালয়ের সচিব/সিনিয়র সচিবের কাছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাবে বলা হয়, বিভিন্ন সরকারি দফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের মধ্যে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং ক্ষেত্রবিশেষে পুরোনো জনবলের পরিবর্তে অবৈধ অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে নতুন জনবল নতুনভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
এতে বলা হয়, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ নীতিমালা-২০০৮ এবং অর্থ বিভাগের ২০১৬ সালের পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এবং নিয়োগপ্রাপ্তদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও নিবিড় মনিটরিংয়ের প্রয়োজন। সেই সঙ্গে আউটসোর্সিং করা কর্মচারীদের যথাসম্ভব নিজ নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে।
একই সঙ্গে প্রস্তাবে আরও বলা হয়, এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে। এ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেছেন। এমতাবস্থায়, অনুশাসন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য সচিবদের অনুরোধ জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সরকারের প্রশাসনিক কাঠামোতে স্থায়ী ও অস্থায়ী লোকবল নিয়োগের পাশাপাশি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়। সাধারণ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়। অস্থায়ীভাবে চুক্তিতে এই নিয়োগ পান তারা।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দফতর, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন করপোরেশন এবং বিভিন্ন প্রকল্পে লোক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ নীতিমালা-২০০৮ প্রণয়ন করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর, হাসপাতালসহ বিভিন্ন দফতরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই এটি দুর্নীতির অন্যতম উৎস হয়ে উঠছে। অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে চলে কোটি কোটি টাকার এ বাণিজ্য। আউটসোর্সিংয়ের এসব দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মাঝে মধ্যে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে।#