দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
বিদেশে অর্থপাচারও ঋণ জালিয়াতি মামলার আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) সহযোগী ও তার ভ্রমণের সঙ্গী নাহিদা রুনাইকে দুদক কেনো গ্রেফতার করা হয়নি বলে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট।
পি কে হালদারের অর্থপাচারে সহায়তাকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীসহ আরো অনেকের নাম গ্রেফতারকৃতরা প্রকাশ করার পরও দুদক তাদের গ্রেফতার করছে।
সোমবার (১৫ মার্চ) পি কে হালদারের পালানোর বিষয়ে শুনানিতে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দীন শামিমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এসব প্রশ্ন তোলেছেন। আগামী এপ্রিলের প্রথম দিকেই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন আদালত।
আজ সোমবার আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবিন রাব্বানী দীপা ও আন্না খানম কলি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ আজিজ।
শুনানিকালে পি কে হালদার পালানো ও তার দুর্নীতির বিষয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, পিকে হালদার ইস্যুতে অনেককে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ১৬৪ ধারায় যাদের নাম এসেছে- শাহ আলম, এস কে শুর, পিকের বান্ধবী নাহিদা রুনাইকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না? দুদক তাদের গ্রেফতার না করলে আদালত তাদের গ্রেফতারের আদেশ দেবে।
হাইকোর্ট বলেন, পি কে হালদার কাদের অবহেলায় পালালো সেটা বের করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ।
আদালতরে নিষেধাজ্ঞার পরও কিভাবে পিকে হালদার পালালো সেটা দুদককে লিখিত আকারে জানাতে বলেন। একই সঙ্গে গ্রেফতারকৃতদের জবানবন্দিতে যাদের নাম এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছে সেটাও দুদককে জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি যারা অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন। আর এ বিষয়ে কোনো ছাড় নয় এবং গভর্নরের দেওয়া তালিকা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আদালত।
অভিযোগ রয়েছে, পি কে হালদার অন্তত ২৫ বার সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেন। অবন্তিকা আর রুনাই এতটাই ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন যে, একজন চালাতেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, অন্যজন চালাতেন পিপলস লিজিং। এই দুজনের কথায় হতো লিজিং কোম্পানি দুটির ঋণ বিতরণ।
ইতোমধ্যে দুদকের মামলায় আদালতে দায় স্বীকার করে পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীর ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। গত সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
এদিকে সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী ও তার স্ত্রী এবং নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলম ও তার দুই স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক। ঘুষ কেলেঙ্কারিতে আলোচিত সাবেক ও বর্তমান ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তার তথ্য চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে সব ব্যাংকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবারের (১৬ মার্চ) মধ্যে তাদের অ্যাকাউন্টের লেনদেনসহ যাবতীয় তথ্য দেয়ার দিন রয়েছে। বিএফআইইউ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়ার নজির নেই বলে জানা গেছে।
চিঠিতে সুর চৌধুরী ও তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী এবং শাহ আলম ও তার দুই স্ত্রী শাহীন আক্তার শেলী ও নাসরিন বেগমের নাম উল্লেখ রয়েছে। এদের সবার অ্যাকাউন্ট খোলার ফরম, লেনদেনসহ যাবতীয় তথ্য মঙ্গলবারের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গোয়েন্দা সেল থেকেও সুর চৌধুরী ও শাহ আলমের তথ্য চেয়ে ব্যাংকগুলোতে চিঠি দেয়া হয়।
মূলত পিকে হালদারের নিয়ন্ত্রণাধীন ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি রাশিদুল ইসলামের আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে এ দু’জনের ঘুষ নেয়ার বিষয়টি উঠে আসে।/