দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিদায়ী চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন ,’গত ৫ বছর ‘আমার চেষ্টা ছিল দুদককে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। আমি চেষ্টা করেছি। তবে আমি তৃপ্ত নই। জনগণের আস্থার প্রতিদান সেভাবে দিতে পারিনি। জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। তবে একটা বার্তা দিতে পেরেছি, আর তা হলো-কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’ তিনি বলেন, ‘,রাষ্ট্রের প্রয়োজনে ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বাথে গৃহিত অনেক সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি’।
সোমবার (৮ মার্চ) দুপুরে সেগুনবাচিায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সরাসরি বিদায়ী সংবাদ সম্মেলন ইকবাল মাহমুদ এসব কথা বলেন। দুদক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সবার সম্পদের হিসেব প্রকাশ করবেন কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এটা করতে গেলে আইন সংশোধন করতে হবে। তিনি নিজেও সম্পদের হিসেব প্রকাশের পক্ষে না বলে জবাব দেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গত ৫ বছরে তার নেতৃত্বাধীন কমিশনের কাজে আত্মতৃপ্তির কোন সুযোগ নেই। যেটা করতে পারেননি, সেটার দায়ভার তার কমিশনের। আর যেটা করতে পেরেছেন সেটার কৃতত্ব পুরো কমিশনের ও মিডিয়ার। মিডিয়ার কর্মীরা সব সময় দুদকের কাযৃক্রমকে সহযোগিতা করে আসছেন।
সরকারের মন্ত্রী, রাজনৈতি নেতা কিংবা রাষ্ট্রীয় চায় ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কেউ কখনো চায় প্রয়োগ করেননি। তবে আত্মীয়তার সূত্রে একজন মন্ত্রী তার দপ্তরে চা খেতে এসে ছিলেন। কারণ চাপ থাকলে তিনি দুদকের চাকরি ছেড়ে চলে যেতেন। তিনি চাকরি জীবনে ২৬ টা দপ্তরে কাজ করেছেন, কোথায়ও বেশি দিন কাজ করেননি। দুদকের এটা হতো ২৭ তম ।
দুদকের অভ্যন্তরিণ দুর্নীতি ও ঘুষ কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার নজড়ে আসার পর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। ৬/৭ জনকে চাকরি থেকে বিদায় করা হয়েছে। তিনি কাজে কর্মের জবাব দিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছেন।
দুদকের মামলার সাজা আগে ৬৬ শতাংশ ছিল, বর্তমানে ৭৫ শতাংশ হয়েছে।
মানিলন্ডারিং ও অর্থ পাচারের মামলা দুদক ছাড়া আরো ৭/৮ টা সরকারি সংস্থা করছেন। অথচ জনগণ মনে করেন এটা শুধুমাত্র দুদকের দায়িত্ব।
বেসিক ব্যাংকের ৬৫টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন কেনো এখনো হয়নি কেনো ? এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এটা তদন্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব। কারণ বেসিক ব্যাংকের টাকা কোথায়, কার কাছে গেছে, সেটা পরিস্কার করে বলতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে পারেনি, তাই তদন্ত প্রতিবেদন ফেরত পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ ২০১৬ সালের ১০ মার্চ দুদক চেয়ারম্যান হিসাবে তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামানের স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি দুদকের পঞ্চম চেয়ারম্যান হিসাবে মঙ্গলবার (৯ মার্চ) তার মেয়াদ শেষ করবেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালের জুন মাসে পদোন্নতি পেয়ে সচিব হন ইকবাল মাহমুদ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাকে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের (বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) সচিব করা হয়।
এরপর ২০১২ সালে সরকার ‘সিনিয়র সচিব’ নামে নতুন পদ সৃষ্টি করলে আরও সাতজনের সঙ্গে ইকবাল মাহমুদও ওই পদ পান। সে সময় তিনি ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব। ওই বছর নভেম্বরে তিনি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) বিকল্প নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পান।
২০০৪ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন গঠিত হলে বিচারপতি সুলতান হোসেন খানকে চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০৭ সালে এক এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সাবেক সেনাপ্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর হাসান মশহুদ চৌধুরী পদত্যাগ করার পর চেয়ারম্যানের শূন্যপদে নিয়োগ পান সাবেক সচিব গোলাম রহমান। এর পর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন দুদকের কমিশনার বদিউজ্জামান। এর বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান। আগামী ২৩ মাচ ইকবাল মাহমুদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। একই সঙ্গে দুদকের চেয়ারম্যনের দায়িত্বে আসছেন মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।/