দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
মৃত ব্যক্তির ব্যাংকে রেখে যাওয়া টাকার পাওনাদার নির্ধারণে শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এসেছে মামলাটি। ওই টাকার সত্যিকার পাওনাদার কে, মৃত ব্যক্তির নমিনি করা (বাবা ও ভাই) নাকি তার উত্তরাধিকাররা। বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের রায়ের পর এবার এই মামলাটির শুনানির হবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি হলো; মুন্সীগঞ্জ সদরের বৈধড় গ্রামের অধিবাসী পাবলু মোল্লা নামে এক সব্যক্তি অগ্রণী ব্যাংকের মুন্সীগঞ্জ শাখায় সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্টে ২০০৮ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত ৫,২৫,৬৭৮/- টাকা জমা রেখে মারা যান।
পরে ওই টাকার পাওনাদার নিহতের বাবা.ভাই ও স্ত্রীসহ উত্তরাধিকারদের মধ্যে বিরোধের মামলাটি শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রায় প্রদান করেন। রায়ে ব্যাংকে জমা রাখা মৃত ব্যক্তির টাকা নমিনি নন, উত্তরাধিকারীরা পাবেন ঘোষণা করেন।
এদিকে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে মৃত ব্যক্তির নমিনির দাখিল করা ‘লিভ টু আপিল’ গ্রহণ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আবেদনটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন।
এই বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত।
তিনি জানান, এর আগে প্রথম বিচারিক আদালতের রায়ে ওই টাকা মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীরা পাবেন উল্লেখ করেন। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে নমিনির আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, মামলার বিবরণীতে উল্লেখ রয়েছে মুন্সীগঞ্জ সদরের বৈধড় গ্রামের অধিবাসী পাবলু মোল্লা অগ্রণী ব্যাংক মুন্সীগঞ্জ শাখায় সঞ্চয়ী হিসাবে ২০০৮ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত ৫,২৫,৬৭৮/- টাকা জমা রেখে মারা যান। এরপর ওই টাকার উত্তরাধিকারী দাবি করে মুন্সীগঞ্জ আদালতে আবেদন নিয়ে যান পাবলু মোল্লার স্ত্রী আরফিন নাহার পুতুল (২২)।
২০০৮ সালে ১৬ অক্টোবর সেই হিসাবের তথ্যবিবরণী তার স্ত্রী আরফিন নাহার পুতুল হলফনামা আকারে বিচারিক আদালতে জমা দেন। যেখানে ওই টাকার তথ্য উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ওই সঞ্চয়ী হিসাবে নমিনি ছিলেন পাবলু মোল্লার বাবা খলিল মোল্লা ও পাবলুর ভাই।
পরে নমিনিরা বিচারিক আদালতে গিয়ে আবেদনে বলেন, মৃত পাবলু মোল্লার স্ত্রী আরফিন নাহার উত্তরাধিকারী দাবি করতে পারেন না। কারণ পাবলু মোল্লার ব্যাংক হিসাবে তাদের (বাবা ও ভাই) নমিনি করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জের যুগ্ম জেলা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদের বিচারিক আদালত মামলাটির শুনানি শেষে রায় প্রদান করেন। তিনি রায়ে উল্লেখ করেন ওই মৃত ব্যক্তির ব্যাংকে গচ্ছিত থাকা টাকা নমিনি নন, উত্তরাধিকারীরা পাবেন।
আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত জানান, ব্যাংক কমিশন অ্যাক্ট-১৯৯১ সালের আইনের (১০৩) ধারা অনুযায়ী ব্যাংকের টাকা নমিনিকে দেয়ার নিয়ম থাকলেও বিচারিক আদালতের রায়ে বলা হয়েছে নমিনি নন, উত্তরাধিকারীকে দিতে হবে ওই গচ্ছিত টাকা। তাই বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করা হয় হাইকোর্টে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মামলাটির শুনানি শেষে মৃত ব্যক্তির ব্যাংকে রেখে যাওয়া টাকা নমিনি নন, উত্তরাধিকারীরা পাবেন বলে উল্লেখ করে, বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন।
যারফলে নমিনি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল গ্রহণ করা হয়েছে। সেটি এখন আপিল বিভাগে শুনানি হবে।/