দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে শিশুদের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের মামলায় সর্বোচ্চ ১০ বছরের সাজা দেওয়ার ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেছেন হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ। অপরাধ যা-ই হোক না কেন, একজন শিশুকে ১০ বছরের বেশি সাজা প্রদান করা যাবে না।
বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) বিচারপতি মো. সওকত হোসেন, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এএসএম আব্দুল মবিনের সমন্বয়ে গঠিত ৩ বিচারপতির হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের স্বাক্ষরে এই ঐতিহাসিক রায়টি প্রকাশিত হয়েছে।
হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের রায়ে মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টের একটি মামলার রায় পর্যালোচনাসহ বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ আদালতের নজিরগুলো উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের লিখিত আর্টিকেল, বই, সায়েন্টিফিক রিসার্চের ফলাফল নিয়েও আলোচনা করে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে রয়েছে;
শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ জুবেনাইল বিচার পদ্ধতির ধারণার পরিপন্থী।
নিউরোসায়েন্স এবং সাইকোলজিকাল গবেষণা অনুযায়ী, শিশুরা তাদের কর্মের পরিণতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল নয়।
শিশুরা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বস্তুত, ব্রেনের যে অংশ আবেগ ও যৌক্তিকতা নিয়ন্ত্রণ করে, শিশু অবস্থায় ব্রেনের সে অংশ পরিপক্ক হয় না।
শিশুরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পরিণতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখে না। অনেক ক্ষেত্রে তারা অপরাধের দোষ নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে নেয়।
কোনও কোনও ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পাওয়ার প্রলোভনে শিশুরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়ে যায়।
রায়ের কিছুর সিদ্ধান্ত হলো:
শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কোনও সাক্ষ্যগত মূল্য নেই।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কোনও শিশুকে সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
অপরাধ যা-ই হোক না কেন, একজন শিশুকে ১০ বছরের বেশি সাজা প্রদান করা যাবে না।
প্রসঙ্গত,শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে দেশের ফৌজদারি কার্যবিধিতে সুনির্দিষ্ট কোনও বিধান নেই। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক গঠন বিবেচনায় ১৯৭৪ সালের শিশু আইন অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালিত হয়ে আসছে।
২০১৩ সালে নতুন শিশু আইন প্রণয়ন করা হয়। এই আইনে শিশুর বয়স, জবানবন্দি গ্রহণ, দণ্ড ও শিশু শোধনাগারসহ বিশেষ বিশেষ বিধান রাখা হয়।
এই বিষয়ে দেশের উচ্চ আদালতের পক্ষে-বিপক্ষে রায় ছিল। সে কারণে ফুল বেঞ্চ গঠনের জন্য প্রধান বিচারপতির বরাবর একটি আবেদন পাঠানো হয়েছিল।
ওই আবেদনের ধারাবাহিকতায় বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টে তিন সদস্য বিশিষ্ট ফুল বেঞ্চ গঠন করে দেন।
যেহেতু আইনের জটিল ব্যাখ্যা জড়িত, সেহেতু হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেসেন, এমআই ফারুকি এবং শাহদীন মালিককে এমিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। সবার শুনানি শেষে এই মামলার রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। /