দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
দেশের বহুল আরোচিত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের এমপি পদ বাতিল ও আসন শূন্য ঘোষণা করার এখতিয়ার জাতীয় সংসদের স্পিকার বলেছেন হাইকোর্ট।
মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতের আদালতে ৪ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর শুনানিকালে হাইকোর্ট এই মন্তব্য করেছেন।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে এ কথা বলেন হাইকোর্টের বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।
পাপুলের প্রতিদ্বন্দ্বী সংসদ সদস্য প্রার্থী আবুল ফয়েজ ভুইয়ার পক্ষে রিটকারী আইনজীবী শেখ আওসাফুর রহমান এ তথ্য জানান।
আদালতের বরাত দিয়ে তিনি জানান, শহীদ ইসলাম পাপুল নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়ে গেছেন। যে কারণে এখানে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই। তার এমপি পদ বাতিল ও আসন শূন্য ঘোষণার আবেদন নিষ্পত্তি করতে পারবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার।
রিট আবেদনকারীর অপর আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগান বলেন, শেখ আওসাফুর রহমান আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। ব্যক্তিগত কারণে তিনি ঢাকার বাইরে রয়েছেন। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
এদিকে আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ রেজা এবং এবিএম সিদ্দিকুর রহমান খান আদালতে পাপুলের অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের আবেদন করেন। আদালত তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি।
এর আগে নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেয়া ও শিক্ষাগত যোগ্যতার জাল সনদ দাখিল করায় পাপুলের সংসদ সদস্য পদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট দায়ের করেন একই আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া।
ওই রিটে জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক ও সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে বিবাদী করা হয়।
এই রিট আবেদনের ভিত্তিতে গত বছরের ১৮ আগস্ট অপর একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল দিয়েছিলেন। তখন আদালত জানতে চান— লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত পাপুলের এমপি পদ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না?
গত বছরের ১২ জুলাই লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা আবুল ফায়েজ ভূঁইয়া পাপুলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগ এনে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিলের আবেদন করেন। জাতীয় সংসদের পাশাপাশি তিনি নির্বাচন কমিশনেও আবেদন করেন।
শেখ আওসাফুর রহমান বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পপুল নির্বাচন কমিশনে ডিগ্রি পাসের সার্টিফিকেট জমা দেন। আর তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেন স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) ডিগ্রি অর্জন করেছেন। অথচ তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সনদ জমা দেননি। এই প্রতারণা করে তিনি সংসদ সদস্য থাকতে পারেন না।
মানবপাচার, ভিসা বাণিজ্য ও অর্থ পাচারের অভিযোগে গত বছরের ৬ জুন কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ পাপুলকে গ্রেফতার করে। এরপর জানুয়ারিতে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের দায়ে তাকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন দেশটির আদালত।
পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতের আদালতের চলমান তিনটি মামলার একটিতে এ শাস্তি দেয়া হয়। এর মধ্যে, কুয়েতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ ও তার প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে কুয়েতি কর্মকর্তাদের সঙ্গে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মামলায় তার কারাদণ্ড ও জরিমানা হয়। মানবপাচার ও অর্থ পাচারের অন্য দুটি মামলার শুনানি এখনো চলমান।/