দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
সঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের ভাই জগলুল ওয়াহিদের মৃত্যুর খবর গোপন করে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় অভিযুক্ত আঞ্জু কাপুরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন।
মলবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামি আঞ্জু কাপুরকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামির পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করলে রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরোধিতা করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ড এবং জামিন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে মঙ্গলবার সকালে তাকে গুলশানের বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি বলছে, স্বামীর মৃত্যুর বিষয়টি গোপন রেখে সিটি ব্যাংক গুলশান এভিনিউ শাখা থেকে অ্যাকাউন্ট পরিচালনার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি ওই টাকা উত্তোলন করেন, যা স্পষ্টত জালিয়াতি। যে কারও মৃত্যুর পর সম্পদ ও অর্থের মালিকানা এবং ভাগাভাগি হয় ওয়ারিশদের মধ্যে। সেটি তিনি করেননি।
দুপুরে সিআইডির ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, স্বামীর (মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদ) মৃত্যুর পরদিনই তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখার স্বামীর সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। আইনত কারো মৃত্যুর পর ওয়ারিশদের জানাতে হয়, মালিকানা ও সম্পদের বণ্টনও ওয়ারিশদের মধ্যে হয়।
এটি তিনি না করে স্বামীর মৃত্যুর খবর গোপন করে ওই টাকা উত্তোলন করেন, যা স্পষ্টত জালিয়াতি। এজন্য গুলশান থানায় গত ২৫ ডিসেম্বর মেয়ে মুশফিকা মোস্তফার দায়ের করা জালিয়াতির মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদী মুশফিকা মোস্তফা অভিযোগ করেন, আমার বাবা গত বছরের ১০ অক্টোবর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বাবার মৃত্যুর আগে আঞ্জু কাপুর নামে এক ভারতীয় নারীকে গৃহপরিচারিকা হিসেবে নিয়োগ দেন।
বাবার মৃত্যুর পর ১২ অক্টোবর সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখায় গেলে ব্যাংক থেকে আমাকে জানানো হয়, গতকাল অর্থাৎ ১১ অক্টোবর আঞ্জু কাপুর ব্যাংকে এসে টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। এমনকি বাবার মৃত্যুর বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানানো হয়নি।
বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে গত ৩ নভেম্বর হাইকোর্ট দুই বোন এবং তাদের বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুরের সম্পত্তি দাবির স্বপক্ষে কাগজপত্র হলফনামা আকারে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের সব ব্যাংক হিসাবের লেনদেন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে আদেশ দেন।
একইসঙ্গে গুলশানের (২-এ/৯৫ নম্বর) ওই বাড়িতে থাকা জিনিসপত্র কোনো পক্ষ বাইরে নিতে পারবে না এবং দুই বোনের নিরাপত্তা অব্যাহত রাখতে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেয়া হয়। এর পর দুই বোনকে বাড়িতে ফিরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী গুলশান থানা পুলিশ তাদের বাড়িতে নিয়ে যান।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর বাবার মৃত্যুর পর মালিকানা নিয়ে বিরোধে গুলশান ২-এ/৯৫ নম্বর সড়কের ৪ নম্বর বাড়ির সামনে অবস্থান নেন দুই বোন। তাদের দাবি, বাড়ির দখল বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আঞ্জু কাপুরের হাতে। তিনি কিছুতেই ওই বাড়িতে তাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না।
পরে বাড়ির সামনে দুই বোনের অবস্থান নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ আসার পরে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল বেঞ্চ বাড়িতে প্রবেশ এবং সেখানে তাদের অবস্থান নিশ্চিতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে ওইদিন রাতেই আদালতকে জানাতে বলা হয়। আদেশ বাস্তবায়ন করার পরে তিনি তা আদালতে জানান।/