দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনারসহ সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সম্পদের হিসাব বিবরণী প্রকাশ করলে মানুষের কাছে দুদকেরর গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়ার বিষয়ে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার ভুলে নিরাপরাধ এক ব্যক্তির দণ্ড নিয়ে করা রিট আবেদনের শুনানিকালে এমন মন্তব্য করেছেন।
আজ বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে ভুক্তভোগী মোহাম্মদ কামরুলের সাজা পরোয়ানা (কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড) প্রত্যাহার করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই ভুলের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
হাইকোর্ট ওই মামলাটি নতুন করে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারিক আদালতকে। রায়ে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করলে তা দুদককে বিবেচনা করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
আজ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে ভিকটিম মোহাম্মদ কামরুলের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী এবংতাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট বিজয়া বড়ুয়া।ফরদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. সারওয়ার হোসেন।
জানা যায়, ১৯৯৮ সালের এসএসসির সনদ জালিয়াতি করে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছেন এক যুবক- এমন অভিযোগ এনে ২০০৩ সালের মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো।
১০ বছর পরে অভিযোগপত্র দাখিল এবং ২০১৪ সালে মামলার বিচার শেষে আসামিকে পলাতক দেখিয়ে তিনটি ধারায় পাঁচ বছর করে ১৫ বছরের সাজা দেন নোয়াখালীর বিশেষ জজ আদালত। পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা করে ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন।
এ দণ্ডে গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতা দেখে নিরাপরাধ যুবক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে তিনি উল্লেখ করেন, তার জন্ম ১৯৯০ সালে। এমনকি তিনি সংশ্লিষ্ট কলেজে কোনোদিন ভর্তি হননি। এরপর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলের জবাবে দুদক বলছে- ‘সরল বিশ্বাসের ভুল (বোনাফাইড মিসটেক)’।
রুলের শুনানিতে খুরশীদ আলম খান বলেন, এই তদন্ত কর্মকর্তার জীবনের এটা প্রথম চার্জশিট।
তখন আদালত বলেন, ‘প্রথমটাই তো তার ভালোমতো করা উচিত ছিল। ২-১ একটা ভুলের কারণে আপনার গোটা প্রতিষ্ঠান (দুদক) প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। কিছু কিছু লোক আছে, জায়গা আছে যেখানে মানুষের প্রত্যাশা হলো তারা ফেরেশতার মতো থাকতে হবে।’
এক পর্যায়ে দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘আমরা চাই আবার ট্রায়াল (বিচার) হোক। সত্যিকার মানুষ (আসামি) আসুক। উই আর এক্সট্রিমলি, এক্সট্রিমলি স্যরি। এটার জন্য পুরো কমিশন দুঃখিত, লজ্জিত। আমরা দুদক আইনের ৩১ (সরল বিশ্বাসের ভুল) কথা বলে সব মামলায় পার পেতে চাচ্ছি না।’
হাইকোর্ট বলেন, ‘কমিশন অনেক ভালো কাজ করছে। কিন্তু ২-১টা ঘটনায় এমন একটা নেতিবাচক সংবাদ সারাদেশে তৈরি হয়, তখন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’
তখন খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আমরা জাহলমের মামলা কনটেস্ট করেছি। কিন্তু এখানে কনটেস্ট করছি না। মেনে নিয়েছি।’
এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘কমিশনের কমিশনারসহ সমস্ত জনশক্তি যদি তাদের হিসাব বিবরণী প্রকাশ করে, তাহলে মানুষের কাছে কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা আরও বেশি বাড়বে।’
আদালতের এই বার্তা দুদককে জানিয়ে দেয়া হবে বলে জানান সংস্থাটির আইনজীবী খুরশীদ আলম।
এরপর আদালত রায় দেন। রায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভুল তদন্তের ওপর নিরাপরাধ যুবককে তিনটি ধারায় দেয়া ১৫ বছরের কারাদণ্ডের রায় বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দিয়ে নতুন করে ওই মামলা তদন্ত করতে বলেছেন উচ্চ আদালত। এছাড়া, তার সাজা পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হয়েছে।/