দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
দুদকের মামলায় সাজা প্রাপ্ত ও পলাতক লন্ডনে অবস্থানকারী বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পর দুদকের মামলায় বিদেশে আত্মগোপনে থাকা আরেক আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) বক্তব্য, বিবৃতি, সাক্ষাতকার গণমাধ্যমে প্রচার বা প্রকাশরে ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ দুদকের মামলার আসামি বিদেশে আত্মগোপনে থাকা পিকে হালদারের বক্তব্য ও সাক্ষাৎকার গণমাধ্যমে প্রচারের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
দুদকের দায়ের করা এক আবেদনের ওপর হাইকোর্ট পিকে হালদারের সাক্ষাৎকার, সংবাদ প্রচার ও পুনঃপ্রচার বন্ধের এ আদেশ জারি করেন।
জানা যায়, ২০১৫ সালে ৭ জানুয়ারি অ্যাডভোকেট নাসরিন সিদ্দিকী লিনার দায়ের করা একটি আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বিএনপি নেতা লন্ডনে অবস্থানকারী ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানের বক্তব্য সবধরনের গণমাধ্যমে প্রচারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন।হাইকোর্ট একই সাথে সরকারের প্রতি রুল জারি করা হয়। ওই নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে।
ওইদিন রিটকারী বলেছেন, আইনের দৃষ্টিতে পলাতক আসামি তারেক রহমানের কোন বক্তব্য বিবৃতি প্রচার বা প্রকাশ নিষিদ্ধ করেছেন হাইকোর্ট। তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করে তার পিতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি দাবি করে ছিলেন।
এছাড়াও তারেক রহমানের দেওয়া আরো অনেক বিতর্কিত বিষয় নিয়ে বক্তব্যগুলো এদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রচার হতে থাকে। এমনকি একুশে টিভিতে তারেক রহমানের বিশেষ সাক্ষাকার প্রচার করা হয়েছিল।
কারণ আইনের দৃষ্টিতে পলাতক তারেক রহমানের বক্তব্য ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ সকল মাধ্যমে প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
রিট আবেদনে বিবাদীরা হয়েছিল, তথ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিটিভি-র মহাপরিচালক, বিটিআরসি-র চেয়ারম্যান, একুশে টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক, কালের কণ্ঠের সম্পাদক, বিডিনিউজ-এর সম্পাদক, জনকণ্ঠ-এর সম্পাদক ও তারেক রহমান৷
ওইদিন হাইকোর্টে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে অংশ গ্রহণ করেন অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, তিনি বর্তমানে মৎস্য ওপ্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন।
অপরদিকে তারেক রহমানের পক্ষে অংশ গ্রহণ নিয়ে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খোন্দকার মাহবুব হোসেন।
পিকে হালদারের ওপর গণমাধ্যমে প্রচারনায় নিষিদ্ধ:
এদিকে বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ দুদকের মামলার আসামি বিদেশে আত্মগোপনে থাকা পিকে হালদারের বক্তব্য ও সাক্ষাৎকার গণমাধ্যমে প্রচার ওপর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
দুদকের দায়ের করা এক আবেদনের ওপর হাইকোর্ট পিকে হালদারের সাক্ষাৎকার, সংবাদ প্রচার ও পুনঃপ্রচার বন্ধের এ আদেশ জারি করেন।
আদালতে আজ দুদকের করা আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। অন্যাদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান গণমাধ্যমকে জানান, দুদকের আবেদনে তথ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রতি এমন নির্দেশনা দেয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে, একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে
সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) পিকে হালদারের প্রচারিত সাক্ষাৎকার এবং প্রচারিত টকশোর ভিডিও ক্লিপ আদালতে তলব চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর দুদকের আইনজীবী বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। আদালত এ বিষয়ে লিখিত আবেদন দিতে বলেন। সে অনুসারে বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) লিখিতভাবে এ আবেদন করা হয়।
তিনি বলেন, পলাতক আসামির সঙ্গে টকশো করতে পারি না। প্রথম কথা হলো, পিকে হালদার পলাতক, আর দ্বিতীয় হলো তার বিষয়ে এই আদালতে একটা সুয়োমোটো মামলা বিচারাধীন। এ অবস্থায় তার প্রচারিত সাক্ষাৎকারে কী আছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এই আদালত সেই ভিডিও সাক্ষাৎকার তলব করে দেখতে পারেন। এরপর প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে পারেন।’
এরপর আদালত লিখিত আবেদন করতে বলেন। এর প্রেক্ষিতে আজ লিখিত আবেদন করেছে দুদক। গত ১৮ নভেম্বর ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে ১৯ নভেম্বর তাকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেফতার করতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
ওই আদেশ অনুসারে দুদক গত ২ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক। এরপর ৯ ডিসেম্বর পিকে হালদারের কাজিন পিপলস লিজিংয়ের সাবেক পরিচালক অমিতাভ অধিকারী এবং পিকে হালদারের সাবেক সহকর্মী ও পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জল কুমার নন্দীকে আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলায় পক্ষভুক্ত করা হয়।
একইসঙ্গে পিকে হালদারের গ্রেফতারি পরোয়ানা ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো এবং তার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়ে আগামী ৩ জানুয়ারি পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
এর মধ্যে গত ২০ ডিসেম্বর দুদক আইনজীবী জানিয়েছেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইন্টারপোলের কাছে পাঠানো হয়েছে।
পিকে হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে দুই বিনিয়োগকারীর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি এক আদেশে প্রশান্ত কুমার হালদারসহ সংশ্লিষ্ট ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
কিন্তু ২৪ অক্টোবর ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের আইনজীবী দুর্নীতি দমন কমিশন এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে জানান, পিকে হালদার ২৫ অক্টোবর রোববার দেশে ফিরছেন না। এরপর গত ২ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠানো হয়।/