দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
রাজধানীর মাতুয়াইলের কাজীরগাও এলাকায় ঢাকা দক্ষিন বিএনপি নেতা নবীউল্লাহ নবীর বড় জামাতা সিরাজ উদ্দৌলা খোকনের বিরুদ্ধে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে “হাজেরা এগ্রোবেজড কোল্ড স্টোরেজ” চালুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই জালিয়াতির ঘটনায় ঢাকা জেলা প্রশাসক, ফায়ার লাইসেন্স, রাজউক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
সরকারি দপ্তরের নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, ঢাকা জেলা প্রশাসকের দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের অনাপত্তি সনদ জালিয়াতি এবং তথ্য গোপন করে মাতুয়াইলের কাজীরগাও এলাকায় “আদ-দ্বীন নবী টাওয়ারের” আন্ডার গ্রাউন্ডে সম্পূর্ন বিধি বহির্ভূত ভাবে “হাজেরা এগ্রোবেজড কোল্ড স্টোরেজ” নির্মাণ করেন সিরাজ উদ্দৌলা খোকন। তিনি গত ২৪ অক্টোবর জাকজমক ভাবে উক্ত কোল্ড স্টোরেজ উদ্বোধন করেছেন।
উদ্বোধন কালে “ প্রথম শ্রেনির জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, এই কোল্ড স্টোরেজটির পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় লাইসেন্স গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, উক্ত কোল্ড স্টোরেজটি পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারি কোন লাইসেন্স গ্রহণ করা হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও কোন ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয়নি। তবে জালিয়াতির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের নামে জাল সনদ সংগ্রহের অভিযোগ রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, কোল্ড স্টোরেজটি গত ২৪ অক্টোবর উদ্বোধন করে ব্যবসা শুরু করেছে। এই কোল্ড স্টোরেজের পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য গত ২০ অক্টোবর পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেন মালিক সিরাজ উদ্দৌলা খোকন।
আরো অভিযোগ রয়েছে,সিরাজ উদ্দৌলা খোকনের আবেদন পত্রের সাথে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি অনাপত্তি সনদপত্র দাখিল করেছেন। কিন্তু এই অনাপত্তি সনদটি সম্পূর্ন জাল এবং এক্ষেত্রে বর্তমানে ব্যবহ্নত ডিজিটাল স্মারকের পরিবর্তে এনালগ স্মারক নং জেপ্রঢা/ব্যঃবা/০৮/৭৭/২০০৭/৫০৮(সং), তারিখঃ ০১/০৭/২০২০ খ্রিঃ ব্যবহার করা হয়েছে।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসকের দপ্তরের নামে প্রদাণ করা অনাপত্তির ‘সনদটি’ নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পরে বিষয়টি পরিস্কারভাবে জানতে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়।
আরো অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে অনাপত্তি পত্র সৃজনকারীর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন একটি মামলা দায়ের করেছে , (মামলা নম্বর -২৬/২০২০ কোতোয়ালী থানা)।
গত ১৬ নভেম্বর উক্ত অবৈধ হাজেরা এগ্রোবেজড কোল্ড স্টোরেজে ডিএমপি এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন। মোবাইল কোর্ট ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ এর আওতায় অবৈধ কোল্ড স্টোরেজের স্বত্তাধিকারী সিরাজ উদ্দৌলা খোকনকে দোষ স্বীকারোক্তি মূলে এক বছর কারাদন্ড প্রদান করা হয় (মোবাইল কোর্ট ৮০/২০২০)।
এছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে উক্ত জাল অনাপত্তি পত্রের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য পত্র প্রেরণ করলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরকে পরিস্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই অনাপত্তির পত্রটি জাল।
এছাড়াও কোল্ড স্টোরেজের নিরাপত্তার জন্য অভিযুক্ত সিরাজ উদ্দৌলা খোকন ‘ফায়ার লাইসেন্স’ গ্রহণকৃত সনদ করেছেন তা নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। উক্ত ফায়ার লাইসেন্স ভবনের ১ম তলার কিছু অংশের জন্য সনদ গ্রহণ করা হয়। অথচ কোল্ড স্টোরেজটি ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে নির্মাণ করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, এরূপ আন্ডারগ্রাউন্ডে কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ করার বিষয়টি রাজউকের নিকট গোচরীভূত হলে রাজউকের পক্ষ থেকে সম্প্রতি ইমারত নির্মাণ আইন, ১৯৫২ লংঘন করায় উক্ত অবৈধ কোল্ডস্টোরেজ অপসারনের জন্য নোটিশ প্রদান করেছে। #