দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেছেন, দুর্নীতি একটি আদিম অপরাধ। প্রায় চার হাজার বছরের পুরানো হাম্মুরাবির আইনের মধ্যেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে নানা কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশের কৌটিল্য তাঁর তত্ত্বে দুর্নীতির অস্তিত্ব এবং এ ধরণের অপরাধের বর্ণণা রয়েছে। তবে ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। দুর্নীতিকে রোধ করার জন্য দমন এবং প্রতিরোধ- দুইদিকেই মনোযোগ দিতে হবে।
বুধবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস পালন উপলক্ষে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক এসব কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভায় বক্তব্য রখেনে, দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, দুদকের সিনিয়র সচিব মো: দিলওয়ার বখ্ত, দুদক মহাপরিচালক সাইদ মাহবুব খান, দুদক পরিচালক আব্দুল্লাহ আল জাহিদ ও দুদক পরিচালক মো: জুলফিকার আলীপ্রমুখ।
এছাড়াও সভায় দুর্নীতি দমন কমিশনের অন্যান পরিচালক এবং বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালকগন ও সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালকগণ অংশগ্রহণ করেন ।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেন, কাজে কর্মে সৎ অফিসারদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। চলমান মহামারী কোভিড- ১৯ এ যখন সারা বিশ্ব কম্পমান তখনো বাংলাদেশ দুর্নীতি হয়েছে। আমাদের সীমাহীন লোভের লাগাম টেনে ধরতে হবে ।
তিনি বলেন, সমাজকে ঠিক করতে হলে প্রথমেই পরিবারকে ঠিক করতে হবে। সন্তানকে পিতা-মাতার আয়ের উৎস জানতে হবে। সমাজকে বেঁধে রাখার জন্য আইনের প্রয়োজন। চাকুরী জীবনে শৃঙ্খলা বিধি মেনে চলতে হবে।
সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, দুদকের মামলার সাজার হার গড়ে ৬৩% জেনে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে অবশিষ্ট ৩৭% মামলায় কেন হেরে গিয়েছে তার কারণ খুঁজে বের করার জন্যও তিনি পরামর্শ দেন। ভাল কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করতে হবে। দুদক একটি দুরূহ কাজ করছে। দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। দুদকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের এমনভাবে জীবন গঠন করতে হবে যেন জনগণ শ্রদ্ধাভরে বলতে পারেন এই ভদ্রলোক দুদকে কর্মরত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে দুদক চেয়ারশ্যান মো. ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘‘শুদ্ধাচারেই পূনরুদ্ধার’’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ ০৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস। আর এদিবসটি গুরুত্ত্ব সহকারে পালনের অংশ হিসেবে দুদক এ আলোচনাসভার অয়োজন করেছে।
তিনি বলেন- বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতি দমন এবং প্রতিকারের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী এবং সমাজের সকলকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
দুদকের কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সততা বিনির্মাণের জন্য সততা স্টোর, সততা সংঘ এবং সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আমরা আশা করি দুর্নীতি দমনেও আমরা বিশ্বের রোল মডেল হতে পারব একটা সময়ে।
তিনি বলেন- দুর্নীতিবাজরা ধরাছোঁয়াার বাইরে তাদের এমন স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার প্রয়োগ করতে হবে। এখন সময় শুদ্ধাচারের। আমাদের আচরণেই আমাদের শুদ্ধাচার প্রতিফলিত হবে । ছোট বড় সকল দুর্নীতি কেই সমান গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। তবে শুদ্ধাচার বর্তমান সময়ের জন্য আরও বেশি জরুরি। বর্তমানে সময়ে দুদকের প্রতি আস্থা ৮৬% উন্নত হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
দুদকের কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন,- মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রাপ্ত এই দেশকে দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়স্থল হতে দেওয়া যাবে না। দুর্নীতি সমাজের ব্যাধি। ঘুষ-দুর্নীতি সমাজ থেকে নির্মূল করতে হবে। সামাজিক সচেতনতা ও অঙ্গীকার ব্যতীত দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়। সুশিক্ষায় জাতিকে শিক্ষিত করতে হবে।
আগামী প্রজন্মের মধ্যে দুর্নীতি বিরোধী চেতনা তৈরি করতে হবে সে লক্ষ্যে দুদক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমরা এই মুজিববর্ষে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হযয়ে স্বনির্ভর-স্বাধীন সুন্দর বাংলাদেশ করার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাব।
তিনি আরো বলেন- সিস্টেম পরিবর্তন ছাড়া দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব নয়। ডিজিটাইজেশনের এর মাধ্যমে দুর্নীতি কমানো সম্ভব। বর্তমানে পাসপোর্ট অফিস, ভূমি অফিসের নামজারি সহ প্রায় ২২টির অধিক সেবা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে গ্রহণ করা যাচ্ছে যার মাধ্যমে দুর্নীতি কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।
জনগণের মধ্যে দুদকের প্রতি বিশ্বাস বাড়াতে পারলে তাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে, ভালোবাসা অর্জন করা সম্ভব হবে। প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে জিজ্ঞাস করতে হবে, আত্মজিজ্ঞাসা আত্মসমালোচনা বাড়াতে হবে। /