আবুল কাশেম, দূরবীণ নিউজ:
এক বাস টার্মিনালের বার্ষিক ইজারায় এক কোটি ২৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৭ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নুর তাপস । আর এ টার্মিনালটি হলো ” গুলিস্তান-জয়কালি মন্দির (সায়েদাবাদ সিটি) স্টপ ওভার বাস টার্মিনাল”।
এ টার্মিনাল এলাকায় বিভিন্ন যানবাহন, মালামাল পরিবহন ও কুলিমজুরি খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের জন্য ইজারাদার নিয়োগের জন্য ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র সুনিদিষ্ট টার্গেট নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু মেয়রের সেই নির্দেশনা এবং টার্গেটকে আমলে না নিয়ে তড়িঘড়ি করে সাজানো টেন্ডারের মাধ্যমে পছন্দের ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়া পায়তারা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অথচ মেয়রের পক্ষ থেকে গুলিস্তান-জয়কালি মন্দির (সায়েদাবাদ সিটি) স্টপওভার বাস টার্মিনালের” বার্ষিক ইজারা মূল্য ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা আদায়ের টার্গেট নির্ধারন করে দেওয়া হয়েছে। একই সাথে এ ইজারার মূল্য কিভাবে অগ্রিম জমা নেওয়া হবে , সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, অতিমাত্রায় গোপনীয়তা বজায় রেখে, ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা তাদের পছন্দের ব্যক্তিদেরকে গুলিস্তান-জয়কালি মন্দির স্টপওভার বাস টার্মিনালের” রাজস্ব আদায়ের ইজারা নিয়োগে একজনকে চূড়ান্ত করেছেন। ইতোমধ্যে ‘উত্তরা চাকা নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক জাকিয়া সুলতানাকে মাত্র ২ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৩ টাকায় উক্ত টার্মিনালের রাজস্ব আদায়ের ইজারাদার নিয়েগে চূড়ান্ত করেছে।গত ২৮ অক্টোবর পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাসের স্বাক্ষরে কিছু শর্তারোপ করে ‘উত্তরা চাকা নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক জাকিয়া সুলতানাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী এক বছরের জন্য গত ৩ সেপ্টেম্বর আহবানকৃত টেন্ডারের বিপরীতে ‘উত্তরা চাকা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ২ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৩ টাকার দরটি অনুমোদিত হয়েছে।
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, দরপত্রের সাথে ৩০ শতাংশ ৮৮ লাখ টাকার পে-আডারটি জমা করা হয়েছে। বাকী ২০ শতাংশের মূল্য ৫৮ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৭ টাকা, উদ্বৃত দরের ৫ শতাংশের জামানত বাবদ ১৪ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৭ টাকা নগদ/ পে- অডারের মাধ্যমে জমা দিতেহবে।
উদ্বৃত দরের ১৫ শতাংশের ভ্যাট বাবদ ৪৪ লাখ টাকা এবং উদ্বৃত দরের ৫ শতাংশ আয়কর বাবদ ১৪ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৭ টাকা সরাসরি নগদ জমা দিতে বলা হয়েছে। আর উদ্বৃত দরের অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ ১ কোটি ৪৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৭ টাকা কার্যাদেশের পরকর্তী ৩ মাসের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তি সম্পন্ন করতে হবে এবং ৭ কার্যদিবসের মধ্যে উক্ত টাকা পরিশোধের জন্য ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগ থেকে গোপনে এবং নির্ধারিত মূল্যের কমে ‘উত্তরা চাকা’ নামের একটি পরিবহন মালিককে উক্ত টার্মিনালের রাজস্ব আদায়ের ইজারা দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশিত হবার পর বেশ সমালোচনা শুরু হয়। পরে গত ১ নভেম্বর মো. মজিবর রহমান খন্দকার -পিতা তোতা মিয়া খন্দকার, ঠিকানা- ২৫৫ পশ্চিম নাখালপাড়া তেজগাঁও, ঢাকার এক ব্যক্তি মেয়রের ধার্যকৃত ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা নির্ধারিত মূল্যে এ টার্মিনালটি ইজারা নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তিনি সরাসরি ডিএসসিসির মেয়রের কাছে গুলিস্তান-জয়কালি মন্দির (সায়েদাবাদ সিটি) স্টপওভার বাস টার্মিনালের” বার্ষিক রাজস্ব মূল্য ৪ কোটি ২০ লাখ টাকায় রাজস্ব আদায়ের ইজারা নিতে আবেদন পত্র জমা দিয়েছেন। মো. মজিবর রহমান এ বিষয়ে প্রকাশ্যে পুনরায় টেন্ডার আহবানের অুনরোধ জানিয়েছেন। তিনি আবেদনে উল্লেখ করেছেন ,এ টার্মিনালের বার্ষিক উজারা মূল্য ৪ কোটি ২০ লাখ টাকায় সব নিয়ম নীতি মেনেই নিতে রাজি আছেন।
আবেদনকারীদের লোকজন এ প্রতিবেদককে বলেন, কার স্বার্থে, মেয়রের নির্ধারণ করা মূল্যের চেয়ে ১ কোটি ২৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৭ টাকা কমে তড়িঘড়ি করে এ টার্মিনালটি উজারা দেওয়া হচ্ছে। আর এ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা প্রয়োজন। তাহলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
মহাব্যবস্থাপকে’র বক্তব্য:
গুলিস্তান-জয়কালি মন্দির (সায়েদাবাদ সিটি) স্টপওভার বাস টার্মিনালের” ইজারা সংক্রান্ত বিষয়ে মেয়র মুখপাত্র জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের এ প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাসের সাথে কথা বলেন। তিনি জানান, এ টার্মিনালের ইজারার টেন্ডারে প্রথম দফায় কেউ অংশ গ্রহণ করেননি। পরে ৩ সেপ্টেম্বরের ডাকা টেন্ডারে একমাত্র ‘উত্তরা চাকা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক জাকিয়া সুলতানা অংশ গ্রহণ করেন। ফলে তার দেওয়া উজারা মূল্য ২ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৩ টাকার দরটি অনুমোদিত হয়েছে। তাকে ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ডিএসসিসির সাধারণ কর্মচারীরা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, বর্তমান মেয়র ব্যারিষ্টার শেখ ফজলে নুর তাপস দায়িত্ব গ্রহণের পর বড় বড় সিন্ডিকেট ভেঙ্গেছেন। তার প্রমাণ এবার কোরবানীর পশুর হাটের ইজারায় সম্পত্তি বিভাগের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সহযোগতায় গড়ে উঠা দীর্ঘদিনের শক্তিশালী সিন্ডিকেট এবার টিকতে পারেনি। মেয়রের নির্ধারিত ইজারা মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে কোরবানীর অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা হয়েছে। টানা ৩/৪ বার টেন্ডার আহবান করতে হয়েছে। এটা ডিএসসিসির ইতিহাসের নজিরবিহীন ঘটনা ।
সাধারণ কর্মচারীদের প্রশ্ন , কিন্তু এমন কি হয়েছে যে, গুলিস্তান-জয়কালি মন্দির (সায়েদাবাদ সিটি) স্টপওভার বাস টার্মিনালের ইজারায় দুই বার টেন্ডার করেই একজনকে ডেকে নির্ধারিত দরের চেয়ে ১ কোটি ২৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৭ টাকা কমে ইজারা দিতে হবে। ডিএসসিসিকে বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অথচ ৪ কোটি ২০ লাখ টাকায় উক্ত টার্মিনালটি ইজারা নিতে এখনো আগ্রহী প্রার্থী রয়েছেন। # কাশেম