দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
ডেঙ্গু ও মশা বাহিত অন্যান্য রোগ থেকে নগরবাসীকে সুরক্ষা দিতে সোমবার থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৫৪টি ওয়ার্ডে আবারো বিশেষ পরিছন্নতা অভিযান (চিরুনি অভিযান) শুরু হচ্ছে। আর এ অভিযান চলবে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত। শুধুমাত্র ৬ নভেম্বর শুক্রবার চিরুনি অভিযান বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা হতে ১২টা পর্যন্ত চলমান থাকবে।
গত শনিবার চিরুনি অভিযান সর্বাত্মকভাবে সফল করতে ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, গণমাধ্যম কর্মীগণ এবং ডিএনসিসির সর্বস্তরের জনগণকে আহবান জানান।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং চিরুনি অভিযান সম্পর্কে নগরবাসীকে অবহিত করতে ইতিমধ্যে ডিএনসিসির সর্বত্র মাইকিং করা হয়েছে।
ডিএনসিসির মেয়র সকল ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরদেরকে চিরুনি অভিযান চলাকালে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যে কোনো মূল্যে সম্মিলিতভাবে অবশ্যই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হবে”।
এক ভিডিও বার্তায় মেয়র বলেন, “বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অসময়ে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত এবং উচ্চ তাপমাত্রার জন্য হঠাৎ করে নগরে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যদিও উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রোগীর সংখ্যা অল্প তথাপি আমরা এই সমস্যাটাকে খুব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
আমরা ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকার ডেঙ্গু রোগীদের ঠিকানা সংগ্রহ করে সেই বাড়ির ৪০০ গজ ব্যাসার্ধে রেপিড এ্যাকশন টিমের মাধ্যমে স্পেশাল পরিচ্ছন্ন এবং মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করেছি।
যে সকল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী আছে সেসকল হাসপাতালের চারপাশে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা এবং মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করেছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকার ডেঙ্গু রোগীদের তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত আছে।
২ নভেম্বর থেকে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডে দশদিন ব্যাপী মশক নিধনে বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ সময় পরিচ্ছন্নতা এবং মশক নিধনের পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে। বিগত দিনে পরিচালিত চিরুনি অভিযানে যে সকল বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছিলো তার তালিকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অ্যাপসে সংরক্ষিত আছে। এবার সেই তালিকা ধরে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং কারো বাড়ির আশেপাশে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মশক নিয়ন্ত্রণে উত্তর সিটি কর্পোরেশন চতুর্থ প্রজন্মের লার্ভিসাইড নোভালিউরন ব্যবহার শুরু করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনই সর্বপ্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র সংস্থা যে, এই সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব এবং কার্যকর লার্ভিসাইড নোভালিউরন বাংলাদেশে ব্যবহার করছে। এই লার্ভিসাইডটি একবার ব্যবহার করলে দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত কার্যকর থাকে।
উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকার মোট ৪০টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। কেন্দ্রগুলির ঠিকানা প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। যে কেউ ইচ্ছা করলে এই সকল কেন্দ্রে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে পারবেন।
মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাসের বাহক এডিস মশা বাড়ি এবং বাড়ির আশেপাশের জমা পানিতে বংশ বিস্তার করে। তাই আপনার বাড়ির অভ্যন্তর এবং আশপাশ পরিষ্কার রাখুন, তিন দিনে একদিন জমা পানি ফেলে দিন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা সবাই একযোগে কাজ করলে আমাদের নগরকে ডেঙ্গু মুক্ত রাখতে পারবো ইনশাআল্লাহ।”
উল্লেখ্য,গত ১৬-২০ মে পর্যন্ত প্রথম দফায় ডিএনসিসির চিরুনি অভিযানে ৯ হাজার ৪৬৩টি স্থাপনা পরিদর্শনকালে ১৮৭টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। আর এডিসের লার্ভা পাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা করেছে।
৬ – ১৪ জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা চিরুনি অভিযানে ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৩৫ টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শনকালে ১ হাজার ৬০১টি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। ওই সময় এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ডিএনসিসির মোবাইল কোর্ট ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে।
৪ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত তৃতীয় দফা চিরুনি অভিযানে ১ লাখ ৩০ হাজার ৯৭৮টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শনকালে ৮৯৮টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। ওই সময় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ডিএনসিসির মোবাইল কোর্ট ২১ লাখ ৬৮ হাজার ৭১০ টাকা জরিমানা করেছে।
৮-২০ আগস্ট পর্যন্ত চতুর্থ দফা চিরুনি অভিযানে মোট ১ লাখ ৩০ হাজার ৯৭৪টি বাড়ি, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শনকালে ৬৯১টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। তখন ডিএনসিসির মোবাইল কোর্ট ১০ লাখ ৪ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে।
এবছর চার দফা চিরুনি অভিযানে ৪ লাখ ৫ হাজার ৫৫০টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শনকালে ২ হাজার ৬৮৬টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। একই সঙ্গে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ডিএনসিসির মোবাইল কোর্ট মোট ৫৮ লাখ ১৬ হাজার ৮১০ টাকা জরিমানা আদায় করেছে।# কাশেম