দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
ধানমন্ডি-২৭ এ গ্যাস লাইন লিকেজের জন্য ‘তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড’ কর্তৃপক্ষ আপাদমস্তক দায়ী। তিতাস গ্যাসের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ ও অসহযোগীতার ফলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
শুধু তাই নয়, ঘটনা পরম্পরায় গণমাধ্যমে বিকৃত তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে নিজেদের দায় এডিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে দোষারোপ করার মাধ্যমে জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা প্রদর্শনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করার অপপ্রয়াস লক্ষণীয়।
শনিবার (১০ অক্টোবর) ডিএসসিসির জনসংযোগ বিভাগ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড’ কর্তৃপক্ষের এই হীন প্রয়াসের সাথে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সম্পূর্ণরূপে দ্বিমত পোষণ করছে এবং ঘটনার আদ্যোপান্থ ও দুর্ঘটনা পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ উপস্থাপনের মাধ্যমে গণমাধ্যমে বরাতে ঢাকাবাসীকে সত্য তুলে ধরার দায়িত্ব অনুভব করছে।
বস্তুত, ডিএসসিসির আওতাধীন ধানমন্ডি ২৭ নম্বর রোডের রাপা প্লাজার সামনের অংশে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের সময় গতশুক্রবার ভোর আনুমানিক সাড়ে ৪টায় এই গ্যাস লাইন লিকেজ হয়। পরবর্তীতে তা তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষেকে অবহিত করা হলে তারা ব্লেইম গেমে মেতে ওঠেন ও গণমাধ্যমে বিকৃত তথ্য সরবরাহের অপচেষ্টা করেন। তিতাস গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এর মত একটি দায়িত্বশীল সংস্থা হতে এ ধরনের আচরণ ও বক্তব্য দায়িত্ব এড়ানোর নামান্তর।
এটা সর্বজন সত্য যে, সামান্য এক পশলা বৃষ্টিতে ঢাকা শহরের যে ক’টি এলাকা হাঁটু পানি/ কোমর পানি/ গলা পানিতে নিমজ্জ্বিত হয়, ধানমন্ডি-২৭ এলাকা তার অন্যতম। বছরের পর বছর জনদুর্ভোগ মোকাবিলাকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
ধানমন্ডি-২৭ এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ঢাকা দক্ষিণের মেয়ররের নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্ট এলাকার পানির ‘ক্যাপমেন্ট এরিয়া’ দুই ভাগে ভাগ করে জলাবদ্ধতা নিরসণের উদ্যোগের অংশ হিসেবে সাত মসজিদ রোডের বাংলাদেশ আই হসপিটাল অংশ হতে ধানমন্ডি-২৭ এর রাপা প্লাজার সামনের অংশ পর্যন্ত ‘স্টর্ম সুয়ারেজ লাইন’ স্থাপনের কাজ বাস্তবায়নাধীন ছিলো।
এই কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়ন ও পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি পত্র গত ১২ অগাস্ট তারিখে সকল অংশীজনকে পাঠানো হয়, যা তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ গত ২৬ অগাস্ট তারিখে রিসিভ করেন (কপি সংযুক্ত- সংশ্লিষ্ট অংশটি লাল করে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয় যে, পাইপ নর্দমা স্থাপনের এলাইনমেন্ট বরাবর আপনার বিভাগ কর্তৃক স্থাপিত ইউটিলিটি সার্ভিস আছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ চলাকালীন সময়ে আপনার বিভাগের একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি কার্যস্থলে সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকা প্রয়োজন।
এমতাবস্থায়, উল্লেখিত সড়কে পাইপ নর্দমা নির্মানাধীণ স্থানে আপনার প্রতিষ্ঠানের ইউটিলিটি সার্ভিস লাইন/পোল সচল রাখার স্বার্থে কাজ চলাকালীন সময়ে একজন উপযুক্ত প্রতিনিধির সার্বক্ষণিক উপস্থিতি একান্তকাম্য। এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ বর্ণিত কাজটি বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হল।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা লক্ষ্য করলাম, গতকাল ভোর আনুমানিক সাড়ে চারটে নাগাদ যখন এ গ্যাস লাইনের লিকেজ শুরু হয় তখন সেখানে তিতাস গ্যাসের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। এমনটি কাজ শুরু হওয়ার পর হতেও সার্বক্ষণিক কোন প্রতিনিধি তিতাস কর্তৃপক্ষ পাঠাননি। এছাড়াও, ঘটনা পরবর্তী সময়ে তিতাস গ্যাস হতে দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করে দাবি করেছেন, ওনারা এ ধরণের কোনো চিঠি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন হতে পাননি বা গ্রহণ করেননি। যদিওবা এতদসঙ্গে সংযুক্ত পত্র সেই দাবিকে শতভাগ নাকচ করে দেয়।
এখানে উল্লেখ করা সমীচীন যে, সড়কের ঠিক কোন অংশ দিয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের সঞ্চাচন লাইন প্রবাহিত রয়েছে এবং মাটির কতটুকু গভীর সেই লাইনটি রয়েছে, তাও সঠিকভাবে ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে তারা বলতে পারেননি। বরং, গতানুগতিকভাবে তারা ডিএসসিসিকে বলেন, এই সড়কে দিয়ে তাদের লাইন সঞ্চালিত হয়েছে যা তথ্যপ্রযুক্তির বর্তমান উৎকর্ষের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে না। তিতাস কর্তৃপক্ষের সমন্বয় সাধনের প্রয়োজন হলে পুরোনো স্কেচ করা কিছু নথিপত্র নিয়ে এসে উপস্থাপন করেন এবং বলেন, অমুক-তমুক সড়কে তাদের লাইন রয়েছে। কিন্তু সড়কের ঠিক কোন অংশে তা কখনো নির্দিষ্টভাবে বলতে পারেন না।
পাশাপাশি তিতাস কর্তৃপক্ষ গ্যাস লাইন লিকেজের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে দায়ী করে যেসব বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রদান করেছেন তা শতভাগ বাস্তবতা বহির্ভূত। কারণ, তারা বলেন, এই লাইন লিকেজের কারণে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও শ্যামলীসহ ঢাকার একটি উল্লেখযোগ্য অংশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে সেই তথ্যেরও কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। বর্ণিত এলাকায় গ্যাস সরবরাহ পুরোদমে স্বাভাবিক ছিলো কারণ ক্ষতিগ্রস্ত লাইনটি তিতাস গ্যাসের একটি ‘রিডান্ডান্ট লাইন’, সেই লাইন দিয়ে কোন গ্যাস সরবরাহ করা হয়না। প্রকৃত সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্থ লাইন হতে প্রায় ৭/৮ ফিট দূর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এমতাবস্থায়, সার্বিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ডিএসসিসি দেখতে পাই যে, এই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার জন্য তিতাস গ্যাস কোম্পানী লিমিটেড শতভাগ দায়ী এবং গণমাধ্যমে বিকৃত তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ চূডান্তভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।
ডিএসসিসি মনে করে, জনদুর্ভোগে ব্লেইম গেম নয়, কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের মাধ্যমে ঢাকাবাসীর সেবা নিশ্চিত করার লক্ষে সকল সংস্থাকে সুষম-সমন্বয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। জনগণের সেবা প্রদানই ডিএসসিসির মূল লক্ষ্য। # প্রেস বিজ্ঞপ্তি ।