বিশেষ প্রতিবেদক, দূরবীণ নিউজ:
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) রাজস্ব বিভাগে কর কর্মকর্তা এবং উপ কর কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে মারাত্নক অনিয়ম, স্বজন প্রীতি, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন , জালিয়াতি এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ডিএনসিসির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই বিদায় নেয়ার এক সপ্তাহ আগে রাজস্ব বিভাগে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিতে গিয়ে তার পছন্দের লোকজনকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন বলে জানা যায়। আর এই পদোন্নতিতে সচিবের দপ্তরের কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেনকে “কর কর্মকর্তা” পদে পদোন্নতির বিষয়টি নিয়ে সাধারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ইতোমধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে দেশের প্রথম শ্রেনির জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডিএনসিসিতে কর কর্মকর্তা পদে ৪ জনকে পদোন্নতি দিতে গিয়ে সচিবের দপ্তরের মনোয়ার হোসেন নামে একজন কর্মকর্তাকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
অথচ প্রাণঘাতি করোনা পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুই জন সিনিয়র উপ কর কর্মকর্তা তসলিম উদ্দিন ও শাহিনুল ইসলাম দেওয়ান বর্তমানে ” কর কর্মকর্তা” হিসেবে আঞ্চলিক কার্যালয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন যাচ্ছেন। কিন্তু এই দুইজনকে কর কর্মকর্তা পদে পনোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
আরো পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, উপ কর কর্মকর্তা পদে তসলিম উদ্দিনের ৩০ বছর এবং শাহিনুল ইসলাম দেওয়ানের ২৭/২৮ বছর যাবৎ কাজ করে যাচ্ছেন। একইসাথে আরো দুইজন সিনিয়র উপ কর কর্মকর্তা মজিবুর রহমান ২৬/২৭ বছর ও আবুল কালাম আজাদের ১৯/২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
ডিএনসিসির সম্বাভ্য পদোন্নতির তালিকায়; ৮ জনের নাম ছিল। এরমধ্যে ৩ জন উপ কর কর্মকর্তাকে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ সিনিয়র এবং উপযুক্ত বিবেচনায় রেখেই ইতোমধ্যে ভারপ্রাপ্ত কর কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করে দায়িত্ব পালন করাচ্ছেন। ওই ৩ জন হলেন, মহিউদ্দিন, তসলিম উদ্দিন ও শাহিনুল ইসলাম দেওয়ান। তবে শুধুমাত্র মহিউদ্দিনকে কর কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু সচিবের দপ্তরের মনোয়ার হোসেন চাকরি জীবনে কোনো দিন উপ কর কর্মকর্তা কিংবা কর কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের রেকর্ড নেই বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আরো অভিযোগ রয়েছে, কর কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির তালকায় যাদের নাম ছিল, সবার “এসিআর ” এক থেকে দুই ও তিন বছরের বিলম্বে জমা দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে। অথচ সচিবের দপ্তর থেকে তৈরি করা কার্যতালিকায় মন্তব্যের ঘরে উদ্দেশ্য মূলকভাবে, শুধুমাত্র তসলিম উদ্দিন ও শাহিনুল ইসলাম দেওয়ানের “এসিআর” বিলম্বে জমা দেওয়ার কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই ত্রুটিকে প্রধান্য দিয়েই এই দুইজনকে কর কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে।
সূত্রমতে, তৃতীয় শ্রেনির কর্মচারীকে উপ কর কর্মকর্তা (ডিটিও) পদে ১১ জনকে পদোন্নতি দিতে গিয়ে আরো বেশি অনিয়ম এবং স্বজনপ্রীতির নজির স্থাপন করেছে ডিএনসিসি। এরমধ্যে কর্তৃপক্ষের দেওয়া ” উপ কর কর্মকর্তা” হিসেবে ২৬ বছর যাবৎ দায়িত্ব পালন করে আসছেন লুৎফর রহমান, ২১ বছর যাবৎ কুশলাল পাল, ১২ বছর যাবৎ মোশাররফ হোসেন, ৩ বছর যাবৎ দায়িত্ব পালন করে আসছেন শেখ ওয়াহিদুজ্জামান, মোস্তাফিজুর রহমান, মাসুদ আনোয়ার ও মামুনুর রশিদ। অথচ এই ৭ জন উপ কর কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেও ওই “ডিটিও”পদে স্থায়ী হতে পারেননি।
অপরদিকে উচ্চমান সহকারী পদে দায়িত্ব পালন করেই এবার উপ কর কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পেয়েছেন অঞ্চল-২ এর মো. আইয়ুব, অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরের কামাল রেজা, রাজস্ব বিভাগের জহিরুল ইসলাম, রেভিনিউ সুপারভাইজার মো. ফারুক। মেয়রের দপ্তরের পিএ- আবুল হোসেন দেওয়ান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরের পিএ- মো. আবদুল আজিজ।
তবে ডিএনসিসিতে রাজস্ব বিভাগে পদোন্নতিতে অনিয়ম এবং স্বজনপ্রীতির বিষয়ে ইতোমধ্যে মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে পরিস্কাভাবে বলেছেন, এ সংক্রান্ত কোনো ফাইল তার কাছে আসেনি। তিনি কোনো ধরনের অনিয়ম এবং দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবেন না। # কাশেম