দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
করোনার কারণে শিশুরা ভুগছে মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লামেশন সিনড্রোম (এমআইএস) নামক জটিল রোগে। ফলে শিশুদের বিভিন্ন অঙ্গ দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলা ও পরীক্ষা না নেয়ার মত দিয়েছে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষা নেয়াও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ১৮তম সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনিও অনলাইনে সভায় অংশগ্রহণ করেন। তার উপস্থিতিতেই আরো কিছু সিদ্ধান্ত দেয় পরামর্শক কমিটি। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলা ও পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে মত প্রকাশ করে সভায় বলা হয়, শিশুদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার কম বলে মনে হলেও পরিসংখ্যান বলে শিশুদের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ একবারে কম নয়।
আইইডিসিআরের বয়স ভিত্তিক তথ্য বিভাজনে দেখা যায়, আক্রান্তদের ৭ থেকে ৮ শতাংশ স্কুলগামী শিশু। এছাড়াও আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবির যৌথভাবে পরিচালিত জরীপে দেখা যায়, ৪ থেকে ৫ শতাংশ শিশু সংক্রমিত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ তুলনামুলকভাবে কম, কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে তাদেরকে সামাজিক মেলামেশা থেকে দূরে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেলামেশা থেকে বিরত রাখা সম্ভব হবে না। পরিবহন ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া একটি বড় ঝুঁকি হলো, শিশুরা সংক্রমিত হলে এদের মাধ্যমে বাড়িতে বড়দের বিশেষ করে পরিবারের প্রবীণ সদস্যদেরও সংক্রমিত হতে পারে।
উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় সংক্রমিত ব্যক্তি উপসর্গহীন হওয়ায় তাদের আইসোলেশন নিশ্চিত করাও সম্ভব হয় না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলে শিশুদের পাশাপাশি শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, অভিভাবকরাও সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকবেন বলে জাতীয় কারিগরি কমিটি মত প্রকাশ করেছে।
কারিগরি কমিটি মত প্রকাশ করেছে যে, বর্তমানে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমিত শিশুদের মাঝে মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লামেশন সিনড্রোম (এমআইএস) নামক জটিলতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এটা বেশ আশঙ্কাজনক এবং তা শিশুমৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখা গেছে যে, মৃদু সংক্রমণের কারণেও দেহের বিভিন্ন অঙ্গ দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা শিশুদের জন্যও প্রযোজ্য।
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সভায় অভিমত ব্যক্ত করেছে যে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা একটি এক মাসব্যাপি দীর্ঘ কার্যক্রম যা দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠিকে জড়িত করে। এর ফলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে জাতীয় কারিগরি পরামশর্ক কমিটি এ সিদ্ধান্তে আসে যে, এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা ও পরীক্ষা নেয়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এমতাবস্থায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলার বিষয়ে মতামত প্রদান করে এবং পরবর্তীতে পরিস্থিতি পর্যালোচনার ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে। #