দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
সাতক্ষীরা জেলায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৫০ গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে ২১ গ্রাম নিয়ে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নটি এখন পানিতে প্লাবিত। এমন বাড়ি নেই, যে বাড়িতে কোমর পানি উঠছে না। এর আগে বাড়িঘর এভাবে তালিয়ে যেতে দেখেনি এই এলাকার মানুষ।
প্রতাপনগর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. আমজাদ হোসেন, ইউপি সদস্য কোহিনুর ইসলাম বাবু, মাসুম বিল্লাহ, কুড়িকাউনিয়া গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুস সাত্তারসহ অনেকে জানান, এলাকার কেউ এখন মারা গেলে কবর দেওয়ার জায়গা টুকুও নেই।
তারা জানান, বেলা ১১টার দিকে সাগরে জোয়ার শুরুর পর বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকে সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বিকেল ৫টার পরে ভাটার টানে পানি কিছুটা সরে গেলেও বসবাসের মতো পরিবেশ নেই। চারিদিকে পানি আর পানি। কষ্টের শেষ নেই মানুষের।
‘‘সরকার যদি দ্রুত বড় করে বেড়িবাঁধ দেয়, তাহলে আমরা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো।’’
আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে কয়েকটি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
শ্রীউলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল জানান, তার গোটা ইউনিয়ন এখন পানিতে নিমজ্জিত। সাধারণ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে।
প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের ২১টি গ্রামে এখন পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বরাদ্দ থাকার পরও যথাসময়ে কাজ না করায় বাঁধ বার বার ভাঙছে।
গাবুরা ইউপি পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, তার ইউনিয়নের নেবুবুনিয়া, গাবুরা ও খলিসাখালী গ্রাম তলিয়ে আছে। আবারও মল্ল্কিবাড়ি, গাজিবাড়ি ও মেইন ক্লোজারের পাশের নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে।
তিনি জানান, এলাকার মানুষকে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে ছয়টি পয়েন্টে রিংবাঁধ দিয়ে পানিবন্ধ করা সম্ভব হলেও নতুন করে সাতটি পয়েন্ট ভেঙেছে। পরবর্তী জোয়ারে কী হবে তা বলা যাচ্ছে না।
আশাশুনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ বি এম মোস্তাকিম জানান, তার উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। টেকসই বাঁধ নির্মাণ ছাড়া বিকল্প নেই।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশ কুমার সরকার জানান, ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থানে রিংবাঁধ দিয়ে পানিবন্ধ করা গেছে। তবে, প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা ও কুড়িকাউনিয়া এবং শ্রীউলা ইউনয়নের হাজরাখালী পয়েন্টে বেঁড়িবাধ ভেঙে এতই গভীর হয়েছে, সেখানে এখন সংস্কার কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলায় ৪০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সার্বিক বিষয় ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। যে সকল মানুষ বেশি সংকটে রয়েছে, তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। #