দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত বাসচালক জামির হোসেন (৬০) মারা গেছেন । এই বাসচালকে ভুলের কারণে (সড়ক দুর্ঘটনায় ) চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন মারা যায়।
শনিবার (১ আগষ্ট) ঈদের দিন সকালে ঢাকার জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
জামিরের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলোকদিয়া ইউনিয়নের দৌলাতদিয়াড় গ্রামের স্কুলপাড়ায়। তিনি চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের চালক ছিলেন।
চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, জামির হোসেন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী থাকাকালে গত শুক্রবার হৃদ্রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। গুরুতর অবস্থায় ওই দিনই তাঁকে কারাগার থেকে ঢাকার জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঈদের দিন সকালে তিনি মারা যান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরকে বহনকারী মাইক্রোবাসের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে–মুচড়ে যায়।
এ সময় ঘটনাস্থলেই তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত ও তিনজন গুরুতর আহত হন। নিহত অন্যরা হলেন,মাইক্রোবাসচালক মোস্তাফিজুর রহমান, প্রোডাকশন সহকারী ওয়াসিম হোসেন ও জামাল হোসেন। আহতরা হলেন,তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, শিল্পী ঢালী আল মামুন ও তাঁর স্ত্রী দিলারা বেগম জলি। হতাহতরা কাগজের ফুল ছবির শুটিং স্পট দেখে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শালজানা গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন।
বাসচালক জামির হোসেনকে ধরতে দুর্ঘটনার পরের দিনই (১৪ আগস্ট, ২০১১) মানিকগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে অভিযান চালায়। ১৪ আগস্ট রাতে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চৌগাছা এলাকায় এক নিকটাত্মীয়ের বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বহুল আলোচিত এই সড়ক দুর্ঘটনার পর ঘিওর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) লুৎফর রহমান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের চালক জামির হোসেনকে একমাত্র আসামি করা হয়।
মামলা দায়েরের আট মাস পর মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। অভিযোগপত্রে জামির হোসেনের বিরুদ্ধে পাঁচটি ধারার অভিযোগ আনা হয়। এগুলো হচ্ছে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো (ধারা ২৭৯), সাধারণ জখম (৩৩৭), গুরুতর জখম (৩৩৮ এর ‘ক’), খুন নয় এমন নরহত্যা (৩০৪) ও মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত করা (৪২৭)।
২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এই মামলার রায় দেন আদালত। বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনকে হত্যার দায়ে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়র জজ আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
জামির হোসেনের উপস্থিতিতে ওই রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। রায়ের পর জামির হোসেনকে প্রথমে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগার ও পরবর্তীতে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছিল। #