দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৩ (র্যাব) এর কর্মকর্তারা রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে অবৈধভাবে ভিয়েতনামে মানবপাচারের সাথে জড়িত ৩ প্রতারককে গ্রেফতার করেছেন। গ্রেফতারকালে বিভিন্ন ব্যক্তির নামের তৈরি করা ২৫৪ টি বাংলাদেশী পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে ও প্রতারিত হয়ে ভিয়েতনাম গিয়ে ২৭ জন নিরীহ বাংলাদেশী আটকা পড়েন। পরে ভিয়েতনাম থেকে ১১ জন বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফেরত পাঠানো হয়। ওই অপরাধের সাথে জড়িত পাচারচক্রের মূলহোতাসহ ৩ জন গ্রেফতার করেছেন র্যাব-৩ এর বিশেষ টিম। বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) র্যাব-৩ বিজ্ঞপ্তিথেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশে বাংলাদেশী শ্রমিকদের সুনাম ও চাহিদার প্রেক্ষিতে বিপুল পরিমাণ জনশক্তি বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। তাদের কষ্টার্জিত আয় আমাদের অর্থনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এ সুযোগে বাংলাদেশের এক শ্রেণীর অসাধু দালাল চক্র স্বল্প আয়ের মানুষদের প্রলোভন দেখিয়ে আন্তর্জাতিক চক্রের যোগসাজসে বিদেশে অবৈধভাবে প্রেরণ করছে।
এ ধরনের প্রতারণার শিকার সাধারণ নিরীহ জনগণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এদের অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ পথে বিদেশ গমনের পূর্বেই মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে। এছাড়াও অবৈধভাবে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশী নৃশংস হত্যাকান্ডের মত ঘটনার শিকার হচ্ছে।এ ধরনের গর্হিত অপরাধের সাথে যুক্তদের আইনের আওতায় আনয়ন ও তাদের মূল উৎঘাটনের লক্ষ্যে র্যাব সর্বদা সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করে আসছে।গত ৩ জুলাই বিশেষ ফ্লাইট নং-ভিজে ৬৯৫৮ যোগে ভিয়েতনাম ফেরত ১১ বাংলাদেশি অভিবাসীর বিষয়ে অবগত আছেন।এছাড়া আরোও ২৭ জন অভিবাসী ভিয়েতনামে আটক অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।এ সম্পর্কে ডিজিটাল ও প্রিন্ট মিডিয়াতেও বিভিন্ন খবর এসেছে। ফেরত ১১ জনেরঅভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাব প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে উক্ত ঘটনার সাথে মাশ ক্যারিয়ার সার্ভিস, দি জেকে ওভারসিস লিমিটেড, এ্যাডভেন্ট ওভারসিস লিমিটেড, মেসার্স সন্ধানী ওভারসিস লিমিটেড এবং আল নোমান হিউম্যান রিসোর্সলিমিটেডসহ স্থানীয় দালাল এবং ভিয়েতনামে বাংলাদেশী দালাল আব্দুল জব্বার, মোস্তফা, গোলাম আজম সুমন, কল্পনা, আজমির, মিলন, শোভন এবং আতিকদের উক্ত ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার সত্যতা পাওয়া যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ওই ঘটনার ধারাবাহিকতায় র্যাব-৩ এর একটি বিশেষ টিম গত ৮ জুলাই বিকেল ৪ টা ৫ মিনিট থেকে
বিকেলে ৫ টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত “মাশ ক্যারিয়ার সার্ভিস” পেরামাউন্ট কম্পিউটার সিটি (৪র্থ তলা), বক্স কালভার্ট রোড, ৬৫/২/১, পুরানা পল্টন, ঢাকা এবং “দি জেকে ওভারসিস লিমিটেড’’ শানজারি টাওয়ার (লেভেল-৩), ৭৮ নয়া পল্টন, মসজিদ গলি, ঢাকা তে অভিযান পরিচালনা করেন ।
অভিযান কালে মানবপাচারকারী চক্রের মূলহোতা ১। মোঃ জামাল উদ্দিন @ সোহাগ (৩৪), পিতা-মৃত আবুল হাশেম, সাং-বাসা নং-৫৫, রোড নং-১৬৫, হাউজিং স্টেট খালিশপুর, থানা-খালিশপুর, জেলা-খুলনা, বর্তমান-বাসা নং-৫৭ দক্ষিণ খিলগাঁও, থানা-শাহজাহানপুর, ডিএমপি, ঢাকা, ২। মোঃ কামাল হোসেন (৩৯) এবং ৩। মোঃ জামাল হোসেন (৩৭), উভয় পিতা-তাজুল ইসলাম, সাং-গনিপুর, থানা-দাগন ভূঞাঁ, জেলা-ফেনী, বর্তমান-বাসা নং-৩৩, উত্তর বাসাবো, থানা-সবুজবাগ ব্যবহারকারীদের গ্রেফতার করা হয়। ধৃত আসামীদের নিকট থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামের ২৫৪ টি বাংলাদেশী পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা একাধিকবার ভিয়েতনামে গমন করে ভিয়েতনামের দালালদের সাথে বৈঠক করে। উক্ত বৈঠকে ভিয়েতনামের দালালরা জানায় বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায়িক উদ্যোক্তাদের ভিয়েতনামে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পূর্বে উল্লেখিত এ্যাজেন্সিগুলো বাংলাদেশের সাধারণ লোকজনকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে মাসে ৪০ হাজার টাকা থেকে ৫০ টাকা ভিয়েতনামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে আয় করা সম্ভব বলে প্রলোভন দেখায়। উক্ত প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে বিভিন্ন লোকজন ভিয়েতনামে যেতে আগ্রহ দেখায়।
এক্ষেত্রে প্রতিটি ভিয়েতনামগ্রামী ব্যক্তির কাজ থেকে ৪ লাখ টাকা করে নেয়। উক্ত টাকার বিনিময়ে গমন ইচ্ছুক ব্যক্তিদের পাসপোর্ট বানানো হয় এবং পাসপোর্টের তথ্যসমূহ ভিয়েতনামের দালালদের নিকট প্রেরণ করা হয়। ভিয়েতনামের দালালগণ উক্ত পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী ভিয়েতনাম হতে অফার লেটার (ভিয়েতনামের ভাষায়) বাংলাদেশের এ্যাজেন্সিগুলোতে প্রেরণ করে।
উক্ত অফার লেটারের মাধ্যমে ভিয়েতনাম এ্যাম্বাসি থেকে ভিসা সংগ্রহ করা হয়। সাধারনত বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ভিয়েতনাম সরকার স্বল্প মেয়াদে (সর্বোচ্চ ০১ বছরের জন্য) বিনিয়োগকারীকে ডিএন ভিসা দিয়ে থাকে।উল্লেখ্য যে, ডিএন ভিসায় ভিয়েতনামে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে নগদ অর্থ নিয়ে যেতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রত্যেক অভিবাসীকে ২ হাজার মার্কিন ডলার নিয়ে যেতে বাধ্য করে।অতঃপর বাংলাদেশী দালালদের মাধ্যমে উক্ত গমন ইচ্ছুক ব্যক্তিবর্গকে বিএমইটি কার্ড প্রদান করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ভিয়েতনামে গমনের পরে এই সাধারন লোকজনকে ভিয়েতনামের দালালগণ এয়ারপোর্টে রিসিভ করে, তাদের পাসপোর্ট কুক্ষিগত করে একটি ঘরে আটক করে রাখে। পরবর্তীতে এদেরকে জিম্বী করে এদের পরিবারের কাছে টাকা-পয়সা চাহিদা করা হয়। এদেরকে কোনো স্থায়ী কর্মসংস্থান না করে বিভিন্ন সময়ে ছোট ছোট কাজ দেয়া হয়। এ পর্যায়ে উক্ত ব্যক্তিবর্গের পক্ষে বাংলাদেশে প্রতাবর্তন করা সম্ভবপর হয় না। তারা ভিয়েতনামে মানবেতর জীবন-যাপন করে।
উল্লেখ্য যে, কুমিল্লা নিবাসী মোঃ নাজমুল হাসান (২৬) মার্চের মাঝামাঝিতে অসুস্থ্য হয়ে বিনা চিকিৎসায় ০৩ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মৃত্যু বরণ করে। নাজমুলের স্বজনরা স্থানীয় দালাল ও দি জেকে ওভারসিস লিমিটেডের সাথে যোগাযোগ করলেও কোন ধরনের সহযোগিতা পায়নি। গত ২৭ জুন ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটির মুসলিম কলোনীতে মোঃ নাজমুল হাসানের দাফন সম্পন্ন হয়।
দি জেকে ওভারসিস লিমিটেড ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ডিএন ভিসার মাধ্যমে ১৪ জন বাংলাদেশীকে ভিয়েতনামে প্রেরণ করে যাদের কারোরই অদ্যবধি কোন কাজের সুযোগ মেলেনি। যার ফলে এ সকল শ্রমিক অর্ধাহার-অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। “মাশ ক্যারিয়ার সার্ভিস”, যাদের কোন নিজস্ব রিক্রুটিং লাইসেন্স নাই, দীর্ঘদিন যাবৎ অন্যান্য এজেন্সীর লাইসেন্স ব্যবহার করে স্থানীয় পর্যায়ে দালাল নিয়োগের মাধ্যমে ভিয়েতনামে অভিবাসী প্রেরণ করে আসছে। # প্রেস বিজ্ঞপ্তি ।