দিদারুল আলম দিদার, দূরবীণ নিউজ :
রাজধানীর মোহাম্মদপুর হাউজিং লিমিটেডের মালিক রফিকুল হক ঝন্টুর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ । এরমধ্যে প্রতারণা, ভাড়াটিয়েদের সাথে অমানবিক আচরণ করা, প্রতিবছর ইচ্ছেমতো বাসা ভাড়া বাড়ানো, ভাড়াটিয়েদের কাছ থেকে বিদ্যুতের বিল নিলেও ডেস্কোকে বিল পরিশোধ করেন না। ফ্রিজে সংরক্ষিত খাবার সামগ্রি পচে নষ্ট হযে যাচ্ছে।
মোহাম্মদপুরে রোড-১, বাড়ি- ৩৭/এ চার তলা বাড়িটির মালিক রফিকুল হক ঝন্টুর বিরুদ্ধেআরো অভিযোগ রয়েছে। তার ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় ছোট্ট একটি খুপরি প্ল্যাটে একমাত্র মেয়ে নিয়ে ভাড়া থাকেন মফস্বল থেকে আসা এক শিক্ষিকা। তিনি মোহাম্মদপুর স্থানীয় একটি প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এই অসহায় শিক্ষিকার সাথে অমানবিক আচরণ করে যাচ্ছেন বাড়ি মালিক। দুই বছর আগে বাসা ভাড়া দেয়ার সময় নানা কৌশলে বাসা ভাড়া অগ্রিম হাতিয়ে নেন।
করোনা পরিস্থিতিতে গত মার্চ মাসে ওই শিক্ষিকা তার গ্রামের বাড়িতে চলে যান। তবে যাবার সময় নিয়মিত বাসা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছেন। কিন্তু প্রিপেড মিটারে পরিশোধিত বিদ্যুৎ বিল বাড়ির মালিক নিজে নিলেও মিটার আপডেট করেননি এবং ওই ফ্ল্যাটে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে রাখেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই শিক্ষিক এই প্রতিবেদককে জানান , ফ্ল্যাটটিতে নিম্ন মানের ফিটিংস,অস্বাস্থ্যকর বাথরুম, টাইলস্ বিহীন ফ্লোর। বাসার মাসিক ভাড়া ১৫ হাজার টাকা, সাথে পানি,গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতে হয়। প্রতিবছর দেড়/দুই হাজার টাকা বাসা ভাড়া বাড়ান।
ভাড়া নেয়ার সময় ঝন্টু সাহেব মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেছেন এবং ফ্লাটের সমস্যা হলেই সমাধান করে দিবেন আশ্বাসও দিয়েছিলেন। এক মাসের ভাড়া অগ্রিম আদায় করে নিয়েছেন। তিনি প্রায় দুই বছর এখানে অনেক সমস্যা ও কষ্ট সয়েই থাকছেন। করোনা সংকট শুরু হলে তার স্কুল এবং টিউশনি গুলো বন্ধ হয়ে যায়।
আর্থিক বৈরী পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকার গত মার্চ মাসে তিনি মেয়ে নিয়ে পৈত্রিক বাড়ি মফস্বল শহরে চলে যান। তবে মার্চ মাসের ভাড়া তিনি মাসের শুরুতেই পরিশোধ করেছিলেন। ফ্ল্যাটে তালা দিয়ে ঝন্টু সাহেবকে অবহিত করে মফস্বলে চলে যান তিনি ( শিক্ষিকা) ।
এ শিক্ষিকা করোনা সংকটে বাবার বাড়িতে থাকাকালীন ‘এপ্রিল ও মে’ মাসে নানা হুমকি ধমকি ও বাড়ির মালামাল বিক্রি করে দিবেন এ ধরনের ব্ল্যাকমেইল করে প্রতি মাসেই ভাড়া দিতে বাধ্য করেন। শিক্ষিকা মফস্বলে গিয়েও টিউশনি, অনলাইন অর্ডারে খাদ্য সরবরাহ এবং নিকটজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে বাড়িওয়ালার ভাড়া পরিশোধ করেন।
এদিকে শুক্রবার ( ১২ জুন) মফস্বল থেকে মোহাম্মদপুরের ওই বাসায় ফিরে আসেন ওই শিক্ষিকা। এসে দেখেন বাসায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় তার ফ্রিজ, ফ্রিজে রাখা নানা খাদ্যসামগ্রী পঁচে বাসায় পঁচা লাশের মতো দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে । বাসার বিভিন্ন সামগ্রীও নষ্ট হয়ে গেছে। কার্ড সিস্টেম বিদ্যুৎ মিটার। এ বাড়িওয়ালা গত দুই মাস ভাড়া নিয়েও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখেন। তিনি কার্ডে টাকা লোড করেননি। কেন এমন করলেন জানতে চাইলে তিনি উল্টো শিক্ষিকার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।
আরো জানা যায়, এ এলাকায় ভাড়ার চাহিদা বেশি হওয়ায় ভাড়া ব্যবসার উদ্দেশ্যে ছোট ছোট খুপরি টাইপের ফ্ল্যাট বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া ব্যবসা করছেন রফিকুল হক ঝন্টু।
নাম প্রকাশ না করে শর্তে অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা জানান, বাড়িটিতে কোন দারোয়ান বা কেয়ারটেকার কখনোই ছিলনা। ভাড়াটিয়া, মেহমানসহ পত্রিকার হকার ইন্টারনেট ডিস লাইনের লোকদের বাড়িতে প্রবেশে পরতে হয় নানা বিড়ম্বনায়। প্রায়ই ঝন্টু সাহেব গেট খোলা ও বন্ধ করাকে কেন্দ্র করে লোকজনের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এ বাড়িতে বেশীদিন ভাড়াটিয়া থাকতে পারেননা। তার আচরণ ও প্রতি বছরই ভাড়া বাড়ানো ও নানা অজুহাতে ভাড়াটিয়াদের কাছে থেকে অর্থ আদায় করাই এর কারণ বলে ভাড়াটিয়ারা জানায়। এখনো বাড়ির সামনে টু’লেট ঝুলছে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মার্চ মাস থেকে জীবন যাত্রা অচল হয়ে পড়ে। এখন অনেক মানুষ কর্মহীন ও আর্থিক কষ্টসহ নানা সমস্যায় রয়েছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে অনেক বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াদের চলমান ক্রান্তিকালীন ভাড়া মাপ করা, অনেক ভাড়াটিয়াদের নানা সহযোগীমূলক আচরণ করছেন। আবার ঝন্টুর মতো কেউ কেউ ভাড়ার জন্য ভাড়াটিয়াদের বাড়ি থেকে বের করা, চাপ প্রয়োগ করে ভাড়া আদায়ের মতো ঘটনাও গনমাধ্যমে এসেছে।
পুলিশ এরূপ ঘটনায় মামলা নিয়ে বাড়ির মালিককে গ্রেফতার করার ঘটনাও আমরা দেখেছি। মহাদূর্যোগ মহামারি কোনো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রাইসিসে ঝন্টুর মতো বাড়ির মালিকরা মানবিক হতে পারেননা। ওদের সমাজ ধিক্কার দেয় ‘কসাই বাড়িওয়ালা’ বিশেষণে। এ ঘটনা বিষয়ে জানতে বাড়িওয়ালা ঝন্টুর ‘০১৯১২২০২৫২৭’ মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে এটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ প্রতিবেদন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা প্রশাসনের নজরে পড়লে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় স্বপ্রনোদিত কোনো পদক্ষেপ ওই বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে নিলেই এর স্বার্থকতা। #