দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) পরিচালিত এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানের (চিরুনি অভিযান) সপ্তম দিনে ১৩ হাজার ৭৭৩টি বাড়ি, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন ইত্যাদি পরিদর্শন করা হয়। এরমধ্যে ১৪৭টি স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়।
এছাড়া ৯ হাজার ৭৬২টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী মশার লার্ভা পাওয়ায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১৯টি মামলা দায়েরের মাধ্যমে মোট ৩ লাখ ৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
শুক্রবার (১২ জুন) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে একযোগে পরিচালিত চিরুনি অভিযানে এই চিত্র পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন।
তিনি আরো জানান, গত ৬ জুন থেকে আজ পর্যন্ত এই ৭ দিনে ৫৪টি ওয়ার্ডে মোট ৯৪ হাজার ১৩৯টি বাড়ি, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করে মোট ১ হাজার ১৩১টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ৬৫ হাজার ৭৪৩টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এছাড়া এ ৭ দিনে মোট ১০ লাখ ৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
চিরুনি অভিযান চলাকালে যেসব বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা কিংবা এডিস মশা বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছে, তার ছবি, ঠিকানা, মোবাইল নম্বরসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে একটি অ্যাপে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এর ফলে চিরুনি অভিযান শেষে ডিএনসিসির কোন কোন এলাকায় এডিস মশা বংশবিস্তার করে তার একটি ডাটাবেস তৈরি হবে। ডাটাবেস অনুযায়ী পরবর্তীতেও তাদেরকে মনিটর করা সহজ হবে।
শুক্রবার উত্তরা এলাকায় মোট ১ হাজার ৮৬টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৭টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৮১৮টি স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এডিসের লার্ভা পাওয়ায় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জুলকার নায়নের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে উত্তরা ৬ ও ৮ নম্বর সেক্টরের ৫টি স্থাপনার মালিককে মোট ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মিরপুর-২ অঞ্চলে আজ ৩ হাজার ৩১৩টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৬টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ২ হাজার ২৬৯টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এ সময়ে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিউল আজম মিরপুর ২ ও ১৩ নম্বর সেকশন এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাওয়ায় ৮টি মামলায় মোট ২ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এর মধ্যে মৈত্রী প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিজ, এমবিএম গার্মেন্টস, এশিউর ডেভেলাপার্সকে ৫০ হাজার টাকা করে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মহাখালী অঞ্চলে আজ ১ হাজার ৫৪৭টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৪৬টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৯৬৬টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মীর নাহিদ আহসান মেরুল বাড্ডা এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাওয়ায় ৬টি মামলায় মোট ৭৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
মিরপুর-১০ অঞ্চলে ১ হাজার ৫৩১টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৭টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৮৮৭টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
কারওয়ান বাজার অঞ্চলে ১ হাজার ৮০৫টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৫টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ১ হাজার ৩৮৯টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
হরিরামপুর অঞ্চলে মোট ১ হাজার ৬৩৮টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৪টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ১ হাজার ২০৩টি বাড়ি/স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
দক্ষিণখান অঞ্চলে মোট ৮৪৫টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ৮টিতে এডিস মশার লার্ভা লার্ভা পাওয়া গেলে বাড়ির মালিকদেরকে সতর্ক করে লার্ভা ধ্বংস করা হয়। এছাড়া ৬৯৬টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
উত্তরখান অঞ্চলে মোট ৬৬৭টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৫টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৪৪৬টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
ভাটারা অঞ্চলে আজ ৪৭১টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ১১টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৩৩৮টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
সাতারকুল অঞ্চলে আজ ৮৭০টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ৮টিতে এডিস মশার লার্ভা এবং ৭৫০টি বাড়ি/ স্থাপনায় এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়।
এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ থাকা স্থানসমূহে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনাপূর্বক কীটনাশক ছিটানো হয়েছে এবং জনসাধারণকে এবিষয়ে পরবর্তীতে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলমান এই অভিযানের পূর্বে ১৬ মে থেকে শুরু করে ঈদুল ফিতরের পূর্ব পর্যন্ত ১, ৬, ১২, ১৮ ও ৩২ নম্বর মোট ৫টি ওয়ার্ডে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। সে সময় ৯ হাজার ৪৬৩টি বাড়ি/স্থাপনা পরিদর্শন করে ১৮৭টিতে এডিস মশার লার্ভার সন্ধান পাওয়া যায়।
এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে ১০ মে ২০২০ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন বাড়ি, স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এ পর্যন্ত মোট ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
লার্ভা পাওয়া স্থানগুলো হচ্ছেঃ পরিত্যক্ত টায়ার, বালতি, ফুলের টব, বোতল, পানির মিটার, গ্যারেজ, পানির হাউজ, মাটির পাত্র, ভাঙ্গা মগ, বাড়ির মেঝে, পানির ট্যাংক, প্লাস্টিকের পাত্র, ছাদের ড্রেন, দইয়ের পাত্র, পরিত্যক্ত কমোড, ডাবের খোসা, ভাঙ্গা পাতিল, বেইজমেন্ট, দুই বাড়ির মধ্যবর্তী স্থান ইত্যাদি।
অভিযান চলাকালে সকল এলাকাতেই এলাকাবাসীকে এডিস মশার বিস্তার রোধে সচেতন করা হয় এবং জরুরি প্রয়োজনে রাস্তায় বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরিধানসহ সকলকে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখার পরামর্শ প্রদান করা হয়। অভিযান চলাকালে ওয়ার্ড কাউন্সিলরবৃন্দ, ডিএনসিসির বর্জ্য ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ, গণমাধ্যমকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা দিতে ডিএনসিসির চিরুনি অভিযান আগামীকালও অব্যাহত থাকবে। # প্রেস বিজ্ঞপ্তি।