দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান স্যারের মৃত্যূর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্তরিক শ্রদ্ধার পাশাপাশি আবেগময় বক্তব্য তুলে দরছেন। এমননি একজন খ্যাতিমান ব্যক্তি তার ফেসবুকে আবেগময় কথাগুলো প্রকাশ করেছেন।
তিনি বিএম এনামূল হক বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায় । তিনি সাংবাদিক বান্ধব। বিএম এনামূল হক সরকারের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। তিনি অভিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে সচিবের দায়িত্ব পালন করেন ,আবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বও পালন করেছেন। পরে মন্ত্রণালয়েও বেশ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় অধ্যাপক ড. মরহুম আনিসুজ্জামান স্যারকে নিয়ে ফেসবুকে বিএম এনামূল হক ভাইয়ের লেখাটি হুবহু ‘ দূরবীণ নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের’ পাঠকের জন্য প্রকাশ করা হলো।
শান্তিতে ঘুমোন স্যার:
বিকেলে ঘুমুচ্ছিলাম।স্ত্রী ড্রইং রুমে টিভি দেখছিলেন।টি ভির স্ক্রল দেখে দৌঁড়ে শোয়ার ঘরে ঢুকে ধাক্কিয়ে তুলে বললো, শুনছো, আনিসুজ্জামান স্যার আর নেই।
আমি শুনে কিছুক্ষণ বাকরুদ্ধ। সম্বিত ফিরে পেয়ে চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। স্যারের সাথে পরিচয়ের সূত্রটা একটু ভিন্নধর্মী।ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র কাউন্সিলর নির্বাচন তখনো হয় নি।এখন কাউন্সিলররা যে দায়িত্ব পালন করেন ,তখন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা এসব দায়িত্ব পালন করতো। যার মধ্যে উত্তরাধিকার সনদপত্র প্রদান অন্যতম একটি অনুসঙ্গ।
অফিসে কাজ করছি, একটা নাম আনিসুজ্জান লেখা স্লিপ এমএল এস এস আমার হাতে দিলো ।আমি অনুমানেই চেয়ার ছেড়ে রুমের দরজা খুলে দেখি, শ্রদ্ধাভাজন আলোকবর্তিকা জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যার একজন অল্প বয়সী মহিলাসহ দরজায় দাড়িঁয়ে।
আমি তাঁকে কদমবুচি করে রুমে এনে সযত্নে বসিয়ে কফি করতে বলে স্যারের কুশলাদি জানতে চাইলে পাশে মলিনমুখে বসা মহিলাকে দেখিয়ে বললেন ও আমার মেয়ে। ও স্বামী বাচ্চাদের নিয়ে অস্ট্রেলিয়া থাকে।কিছু দিন আগে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পথে আকাশেই বিমানে স্ট্রোক করে জামাই মারা যায়।
এখন মেয়ে নাতি নাতনী দের উত্তরাধিকার সনদপত্র না পেলে কোন কাজ এগুচ্ছে না। আমি সংশ্লিষ্ট আনিককে আমার অফিসে আসতে বললাম। তিনি এলেন ।অতি অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের অফিসের কাজ সমাধান হয়ে গেলো। ফাঁকে স্যারকে বললাম একটু আধটু লিখি।সহাস্যে স্যার বললেন আবার আধটু কেন? কথাটা আজ ভীষণ কানে বাজছে।
অনেকদিন স্যারের সাথে দেখা নেই। গত একুশে বইমেলায় দুটো কবিতার বই আর একটি হাইকু কবিতার বই প্রকাশের জন্য আগামী প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী ওসমান ভাইয়ের সাথে আলোচনা চুড়ান্ত করে ফেলেছি।এদিকে আমার এক ছোট বোন তাপসী ইসলাম একদিন গুলশানে স্যারের বাসা থেকে মোবাইলে স্যারের সাথে কথা বলিয়ে দিলো।
অনেকদিন পর কথা হচ্ছে ,শারিরীক কুশলাদী, লেখালিখি ইত্যাকার আলোচনার মাঝে বললাম ,স্যার আমার দুটো কবিতার বই আর একটা হাইকু কবিতার পান্ডুলিপি প্রস্তুত আছে। স্যার শুনেই বললেন হাইকু আমার খুব পছন্দ,এটার মুখবন্ধ আমি লিখে দেবো। আর কবিতার মুখবন্ধের ড্রাফট নিয়ে এসো, আমি প্রয়োজন মত সংশোধন করে সই করে দেবো।একটি বড় ধরণের শারিরীক অসুস্হ্যতায় আমার কোন প্রকাশনা গত একুশে মেলা উপলক্ষে প্রকাশ হয় নি।
ভেবেছিলাম সবকিছুই তো প্রুফ সহ গোছানো আছে। হাতে সময়ও আছে , করোনার প্রকোপ কমে এলে যদি বেঁচে থাকি,স্যারের স্বহস্তে লেখা মুখবন্ধটাই ছেপে দেবো আমার হাইকু গ্রন্হে।
অশ্রুসজল চোখে আজ আপনাকে বলছি,আপনি ওপারে শান্তিতে থাকুন। তবে আমি কার কাছে যাবো মুখবন্ধ লিখতে হে আলোর বাতিঘর। # কাশেম