রানার অটোমোবাইলসের বিরুদ্ধে প্রায় ২১ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির মামলা
দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি :
২০ কোটি ৮৫ লাখ ৬৬ হাজার ৬৭১ টাকা সরকারের ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে রানার অটোমোবাইলস লিঃ এর বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে একটি মামলা দায়ের করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধিনস্থ ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, রানার অটোমোবাইলস লিঃএর প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় ১৫ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার ২৭৬ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে।এই ভ্যাট ফাঁকির টাকার উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২% হারে ৫ কোটি ২৬ লাখ ৯ হাজার ৩৯৫ টাকা সুদসহ মোট ২০ কোটি ৮৫ লাখ ৬৬ হাজার ৬৭১ টাকা প্রযোজ্য।
গণমাধ্যমকে ১১ মে (বুধবার) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান। গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে,নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা ভ্যাট গোয়েন্দা দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে গত ৩০ মার্চ রানার অটোমোবাইলস লিঃএর প্রধান কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে।
রানার অটোমোবাইলস লিঃ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় ২৫৫ তেজগাও ই/এ, ঢাকা-১২০৮। যার বাণিজ্যিক আমদানিকারক ১৩৮/১ তেজগাও ই/এ, ঢাকা-১২০৮। এর ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর- ০০০৪০৭৬৬৮-০২০৩) এবং কারখানাঃ প্যারাগন (বারচালা), ভালুকা, ময়মনসিংহ (এর ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর ০০০৪০৭৫৬২-০১০৩) এ অবস্থিত।
অভিযানকালে প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, ওই প্রতিষ্ঠানটি ৭০ কোটি ৪৭ লাখ টাকার ভ্যাটযোগ্য বিক্রয়মূল্য গোপন করেছে।এই গোপনকৃত বিক্রয়মূল্যে প্রায় ২০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি সংঘটিত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, রানার অটোমোবাইলস লিঃ একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি যার অধীন ০১টি কারখানা, ০১টি বাণিজ্যিক আমদানিকারক এবং একাধিক শোরুম রয়েছে।বাণিজ্যিক আমদানিকারক হিসেবে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানটি মোটরসাইকেল এবং থ্রি হুইলার আমদানি করে কোনরূপ পরিবর্তন না করে গ্রাহকের নিকট সরবরাহ করে থাকে।
কারখানা হিসেবে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানটি মোটরসাইকেল সিকেডি অবস্থায় আমদানি করে তা সংযোজন করে সরবরাহ করে। কারখানা হতে তিন ধরনের গ্রাহকের নিকট বিক্রয় করা হয়:(১) করর্পোরেট গ্রাহক (২) ডিলার এবং (৩) নিজস্ব শোরুরম।
অভিযানে গোয়েন্দার দল দেখতে পান, প্রতিষ্ঠানটি মাসিক দাখিলপত্রে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।পরিদর্শনের শুরুতে কর্মকর্তাগণ প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক দলিলাদি প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করা হলে প্রতিষ্ঠানের সিএফও জনাব শনদ দত্ত ভ্যাট কর্মকর্তাগণের চাহিদা অনুসারে ভ্যাট দলিল উপস্থাপন করেন।
এছাড়া প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মূসক ফাঁকির আলামত থাকায় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে রক্ষিত কিছু বাণিজ্যিক ও মূসক সংশ্লিষ্ট দলিলাদি জব্দ করা হয়।এসব তথ্য ভ্যাট দলিলাদির সাথে ব্যাপক অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত উক্ত প্রতিষ্ঠানটি ১,৮৩৪ কোটি ৪৯ লাখ ৮১ হাজার ৮১৭ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি মাসিক রিটার্নে সর্বমোট ১,৭৬৪ কোটি ২ লাখ ৩৩ হাজার ১৫৬ টাকা বিক্রয় হিসাব প্রদর্শন করেছে। রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রয়ের পার্থক্য পাওয়া যায় ৭০ কোটি ৪৭ লাখ ৪৮ হাজার ৬৬১ টাকা।
তদন্তে পরিহারকৃত ভ্যাট আদায়ের আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি সংশ্লিষ্ট ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে প্রেরণ করা হয়েছে।একইসাথে প্রতিষ্ঠানটি সেবা প্রদানের বিপরীতে মূসক চালান যথাযথভাবে প্রদান করছে কিনা তা সংশ্লিষ্ট মূসক সার্কেল ও বিভাগীয় অফিস হতে তদারকি জোরদার করার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে। #