দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
হাইকোর্ট, দেশের ৯টি স্থল ও নৌ কাস্টমস স্টেশনে (সব বন্দরে) ফলমূল পরীক্ষায় কেমিক্যাল টেস্টিং ল্যাব স্থাপনে অগ্রগতির বিষয়ে জানাতে সরকার সংশ্লিষ্টদের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সময় দিয়েছেন ।
ভোমরা, বুড়িমারী, হিলি, বাংলাবন্ধা, সোনামসজিদ, শ্যাওলা, তামাবিল, বিবিরবাজার ও টেকনাফে অবকাঠামোগত উন্নয়নে এডিবি অর্থায়নে রাজি হয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রতিটিতে একটি করে রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপনে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
মনজিল মোরসেদ জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে বন্দরে কেমিক্যাল টেস্টিং ল্যাব স্থাপনের একমত হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তারা কাজও শুরু করছে। এমন অগ্রগতি হাইকোর্টে জানানোর পর কাজের অগ্রগতি জানানোর জন্যে বলেছেন আদালত। সেই তথ্যটি কর্তৃপক্ষ জানাবে আগামী মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে।
এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি আমদানি করা ফলমূলে রাসায়নিকের মাত্রা কত তা পরীক্ষার জন্য নৌ ও স্থলবন্দরসহ দেশের ৯টি কাস্টমস স্টেশন (রাসায়নিক পরীক্ষাগার) স্থাপনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয়ে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
তাতে বলা হয়, দেশের নয়টি স্থল ও নৌ কাস্টমস স্টেশনে (বন্দরে) অবকাঠামোগত উন্নয়নের অংশ হিসেবে একটি করে প্রতিটিতে রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করতে একমত হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
স্টেশনগুলো হলো— ভোমরা, বুড়িমারী, হিলি, বাংলাবন্ধা, সোনামসজিদ, শ্যাওলা, তামাবিল, বিবিরবাজার ও টেকনাফ।
ফল আমদানিতে রাসায়নিকের মাত্রা পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন বন্দরে কেমিক্যাল টেস্টিং ইউনিট বসাতে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দেয়া এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
গত ১৭ জানুয়ারি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেছিলেন, এ বিষয়ে শুনানির জন্য হাইকোর্ট একটি বেঞ্চ গঠন (নট টুডে) করে আদেশ দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে আজ শুনানি হয়। পরে আদালত আমদানি করা ফল পরীক্ষা করার জন্যে দেশের বন্দরগুলোতে কেমিক্যাল টেস্টিং ল্যাব স্থাপনে তিন মাস সময় দিয়ে আদেশ দেন।
প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগার স্থাপন করতে একমত হয়েছে এনবিআর ও এডিবি।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ঢাকায় একটি সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি তৈরির লক্ষ্যে গঠিত কমিটি ডিপিপি প্রণয়নের কাজ করছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এডিবির টেকনিক্যাল টিমের যাতায়াত ছয়-সাত মাস বন্ধ ছিল। এতে তাদের ফিজিবিলিটি টেস্টের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে আবার পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে দেশের বিভিন্ন স্থল ও নৌ বন্দরের মাধ্যমে বিভিন্ন রাসায়নিক কেমিক্যালযুক্ত ফল আমদানি রোধের জন্য ২০১০ সালে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ রিট পিটিশন দায়ের করেন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি দেশের সব স্থল ও নৌ বন্দরে ছয় মাসের মধ্যে কেমিক্যাল টেস্ট ইউনিট স্থাপন এবং আমদানিকৃত ফলের কেমিক্যালমুক্ততা নিশ্চিত হয়ে দেশে ঢোকানোর ব্যবস্থা করতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেন।
এরপর আদেশের ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চান আদালত। সেই অনুসারে এই প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীনে দেশের ছয়টি কাস্টম হাউস এবং ১৪টি শুল্ক স্টেশনের মাধ্যমে ফল আমদানির সুযোগ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম, ঢাকা ও বেনাপোলের মাধ্যমে বেশিরভাগ ফল আমদানি করা হয়। চট্টগ্রাম এবং বেনাপোলে রাসায়নিক ল্যাবরেটরি রয়েছে।
অন্যান্য কাস্টমস হাউসগুলোতে আমদানিকৃত ফল কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংয়ের মাধ্যমে রাসায়নিক পরীক্ষা শেষে খালাস করা হয়।
নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এই পরীক্ষা করতে এডিবির আর্থিক সহযোগিতায় ঢাকায় একটি সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরি তৈরির প্রস্তাব রয়েছে। এ লক্ষ্যে গঠিত কমিটি ডিপিপি প্রণয়নের কাজ করছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এডিবির টেকনিক্যাল টিমের যাতায়াত ছয়-সাত মাস বন্ধ ছিল। এতে তাদের ফিজিবিলিটি টেস্টের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে পুনরায় পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ১৪টি স্থল কাস্টমস স্টেশনের মধ্যে ভোমরা, বুড়িমারি, হিলি, বাংলাবন্ধা, সোনামসজিদ, শ্যাওলা, তামাবিল, বিবিরবাজার ও টেকনাফের মাধ্যমে ফল আমদানি হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ফরমালিন টেস্ট করা হয়।#