দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
রাজধানীর ইসলামপুরে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দারা ক্লাসিক্যাল হোমটেক্সের বিরুদ্ধে প্রায় ৬ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে ভ্যাট গোয়েন্দাকর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখায় ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ৬ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে মামলাটি রেকর্ড করা হয়। গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানা গেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, গত ২৪ নভেম্বর রাজধানীর ইসলামপুরে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দারা ক্লাসিক্যাল হোমটেক্স নামে তৈরি পোশাক বিপণন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছে। প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ১৪১ কোটি টাকার ভ্যাটযোগ্য বিক্রয়মূল্য গোপন করেছে। এ গোপনকৃত বিক্রয়মূল্যে প্রায় ৬ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ক্লাসিক্যাল হোমটেক্স ইন্ডাস্টিজ লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানটি ১১৪-১১৬ রাজধানীর ইসলামপুর রোডের জাহাঙ্গীর টাওয়ারে অবস্থিত। এর ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর-০০১৭১২৮৫৮-০২০৫।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, গোপন সংবাদ অনুযায়ী ক্লাসিক্যাল হোমটেক্স ইন্ডাস্টিজ লিমিটেড প্রকৃত সেবা বিক্রি গোপন করে চালান ব্যতিত সেবা সরবরাহ করে দীর্ঘ দিন ধরে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে। এ সংবাদের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর সংস্থার উপ-পরিচালক তানভীর আহমেদের নেতৃত্বে গত ২৪ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে গোয়েন্দারা দেখতে পান, প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেটের আওতাধীন কোতয়ালি বিভাগের আরমানিটোলা ভ্যাট সার্কেলে কম রাজস্ব পরিশোধ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রদত্ত মাসিক দাখিলপত্রে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
পরিদর্শনের শুরুতে কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক দলিলাদি প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করা হলে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শামীম হোসাইন ভ্যাট কর্মকর্তাদের চাহিদা অনুসারে ভ্যাট দলিল উপস্থাপন করতে পারেননি। এছাড়া তিনি আরো উল্লেখ করেন, সেবা দেয়ার বিপরীতে সেবার কোনো মূল্য তালিকা নেই। প্রতিষ্ঠানে কোনো ভ্যাট চালান ইস্যু করা হয় না এবং প্রদানকৃত সেবার স্বপক্ষে কোনো তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না।
এরপর প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়ে এবং কম্পিউটারে ধারণকৃত তথ্যাদি যাচাই করে সেবা বিক্রি সংক্রান্ত বাণিজ্যিক দলিলাদি লুকায়িত অবস্থায় আটক করা হয়। এসব তথ্যে ভ্যাট দলিলাদির সাথে ব্যাপক অসামঞ্জস্য ধরা পরে।
তদন্ত অনুসারে, ২০১৭ সালের মে হতে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ২০০ কোটি ৬৭ লাখ ৮২ হাজার ৮২২ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। তবে তারা স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে মাসিক রিটার্নে সর্বমোট ৭৬ কোটি ৮৫ লাখ ৩২ হাজার ৩৩১ টাকা বিক্রিয় হিসাব প্রদর্শন করেছে। রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রয়ের পার্থক্য পাওয়া যায় ১৪০ কোটি ৯৯ লাখ ৫২ হাজার ৪৮৯ টাকা। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় ৪ কোটি ৪৩ লাখ ৮ হাজার ৮৫৭ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে। এই ফাঁকির ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৭৮ হাজার ৪৯৩ টাকা বিলম্বজনিত সুদ হিসেবে প্রযোজ্য হবে।
উল্লেখ্য, সারাদেশে তাদের ৬টি শাখা আছে। প্রতিষ্ঠানটি মূলতঃ বেডশিট, কম্ফোর্টার, কম্বল ও অন্যান্য হোম টেক্সটাইল সামগ্রি তৈরি ও বিক্রয় করে। নতুন ভ্যাট আইন অনুসারে পোশাকের ওপর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য। তদন্তে পরিহারকৃত ভ্যাট আদায়ের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠানো হয়েছে।#