দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
সৌদি আরবে ৬৮ জন ফিলিস্তিনিকে গাজাভিত্তিক শাসকদল হামাসকে সমর্থন করার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। খবর আলজাজিরার ।
আরবি প্রেসের খবরে বলা হয়েছে, গত রোববার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে ফিলিস্তিন ও জর্ডানের ৬৮ নাগরিককে ‘বিশেষ সন্ত্রাসবাদ আদালতে’ বিচারের জন্য উঠানো হয়েছে। গত বছরের এপ্রিলে সৌদির গোপন পুলিশ তাদের আটক করে।
অভিযুক্তদের পরিবার জানায়, তাদের আইনি সহায়তা না দিয়েই বিচার করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ফিলিস্তিনি নাগরিক সাবেক চিকিৎসক মোহাম্মদ আল খুদরি (৮১) দীর্ঘ দিন ধরে সৌদি আরবে বসবাস করে আসছিলেন। তার পরিবার জানায়, তিনি কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত।
আল খাদারির পুত্র হানি সৌদির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও প্রযুক্তির অধ্যাপক- কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকার পরেও তাকে আটক করা হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে জানায়, হামাসের সাথে যোগাযোগ রাখায় ফিলিস্তিনের এই দুই নাগরিককে আটক করেছে সৌদি শাসকরা। এর মাধ্যমে দেশটিতে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করেছে দেশটির শাসক গোষ্ঠী।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী, গবেষক, শিক্ষক, এবং ব্যবসায়ীসহ সৌদি আরবে ঘুরতে যাওয়া বা বসবাসরত ৬০ জন ফিলিস্তিনিকে আটক করে।
আল খুদারি সৌদি আরবে হামাসের প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন। সৌদি আরবের রাজতন্ত্রে পরিবর্তন আসার পরে ফিলিস্তিনপন্থী সৌদি সরকার এখন অনেকটাই ইসরাইলের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছে। যদিও আরব বিশ্বে হামাসকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বৈধ প্রতিরোধ আন্দোলন হিসেবেই দেখা হয়।
কিন্তু বর্তমান সৌদি সরকারের ইসরাইলের প্রতি ঝুঁকে পড়াটা অনেকটাই দৃশ্যমান।
২০১৪ সালে এই ৮৪ বছর বয়সী কিং সালমানের সিংহাসনে আরোহণের মাধ্যমে মূলত তার পুত্র ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) ক্ষমতায় আসার সূচনা হয়।
অধ্যাপক মাহজুব জাওয়াইরির মতে, এমবিএস সৌদির নিয়ন্ত্রণ নিতে আগ্রহী। আর তাই বিদেশি শক্তি বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের রাজনৈতিক সমর্থন প্রয়োজন।
কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের গালফ স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক জাওয়াইরি বলেন, হামাসকে সমর্থন করার জন্য সৌদি আরব ফিলিস্তিনিদের আটক করে রাখার মত কোনো কারণ নেই।
হামাস সোমবার এক বিবৃতিতে এই গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে বলে, গ্রেফতারের ধরণ দেখে মনে হয়েছে এটি সৌদি আরবে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের উপর ‘মিথ্যা অভিযোগ’ এবং ‘অন্যায় বিচার’। সৌদির নিরাপত্তা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হওয়া ফিলিস্তিনিরা জেরুসালেম ও আল আকসা মসজিদের সম্মান রক্ষা ছাড়া অন্য কোন অপরাধ করেনি।
হামাস কর্মকর্তা মোসা আবু মারজুক আলজাজিরাকে এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, তার সংগঠন কয়েক মাস ধরে সৌদি সরকারের সাথে আটককৃতদের মুক্তির জন্য মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সফল হয়নি।
জাওয়াইরি বলেন, সৌদি সিংহাসনে বসতে মোহাম্মদ বিন সালমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনার পিছনে রয়েছে।
এই পরিকল্পনার মাধ্যমে দখলকৃত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের বৃহৎ অংশকে ইসরাইলের সাথে যুক্ত করে এর অবৈধ ইহুদি জনবসতিগুলোকে বৈধতা দিতে চায়।
ট্রাম্প প্রশাসন অধিকৃত জেরুসালেমকে ইসরাইলে ‘রাজধানী’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে যা আন্তর্জাতিক আইন ও ১৯৯৩ সালের ফিলিস্তিন-ইসরাইলের অসলো চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক। #