দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল ইসলামসহ চারজনকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের নোটিশে গ্রামীণ টেলিকমের এমডি নাজমুল ইসলাম, আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী, আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ ও গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলামকে তলব করা হয়েছে।
সোমবার (২২ আগস্ট) দুদকের অনুসন্ধান টিম লিডার ও উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের স্বাক্ষরে পাঠানো তলবি নোটিশে উক্ত চার জনকে আগামী ২৫ আগস্ট দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে। ওই দিন শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলামকে সকাল সাড়ে ১০টায়, আইনজীবি মো. ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফকে বেলা সাড়ে ১১টায় এবং এমডি নাজমুল ইসলামকে দুপুর দেড়টায় দুদকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
গত ১৬ আগস্ট প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ সংক্রান্ত ১১ ধরনের নথিপত্র পেয়েছে দুদক। গত ১ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি অনুসন্ধানে নথিপত্র চেয়েছে দুদক।
জানা যায়, গ্রামীণ টেলিকমের দুর্নীতি,অর্থ আত্মসাৎ এবং অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের টিম গঠন করে দুদক। একই সঙ্গে দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। টিমের লিডার হলেন উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের, উপ পরিচালক সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তার ও নূরে আলম সিদ্দিকী।
দুদক থেকে গ্রামীণ টেলিকমের এমডি বরাবর পাঠানো নোটিশে গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২২ সাল (বর্তমান)পর্যন্ত পরিচালনা পর্ষদের বিস্তারিত তথ্য, গ্রামীণ টেলিকম পরিচালনার আইন ও বিধিসমূহ, গ্রামীণ টেলিকমের লভ্যাংশ বিতরণের নীতিমালা সংক্রান্ত নথিপত্র তলব করা হয়।
পরিচালনা পর্ষদের কোনো সদস্যের এই কোম্পানি থেকে ঋণ পাওয়ার বৈধ অধিকার রয়েছে কি না বা এখন পর্যন্ত পর্ষদের কোন কোন সদস্য কত টাকা ঋণ নিয়েছেন এবং ঋণের অর্থ কীভাবে উত্তোলন করেছেন, এসব বিষয়ে রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি; গ্রামীণফোন কোম্পানিতে গ্রামীণ টেলিকমের কত শেয়ার রয়েছে এবং কার কার নামে শেয়ার রয়েছে তার তথ্যও চাওয়া হয়।
সূত্র মতে, গ্রামীণ টেলিকমের শেয়ারের বিপরীতে ১৯৯৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি কত টাকা লভ্যাংশ পেয়েছেন। উক্ত লভ্যাংশের অর্থ কোন কোন খাতে কীভাবে ব্যয় হয়েছে।
বছর ভিত্তিক তথ্যাদির ছকসহ রেকর্ডপত্র, ১৯৯৭-২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক কতগুলো বোর্ড সভা হয়েছে, বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতি সম্মানী কত, এতদসংক্রন্ত সমুদয় বোর্ড সভায় রেজুলেশনের সত্যায়ি কপি। ২০০৬-২০১০ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পরিমাণ কত এবং উক্ত লভ্যাংশ হতে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য প্রযোজ্য শতাংশ কত, এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের ফটোকপি এবং অর্থ কাকে-কীভাবে, কোন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে তার বিবরণ চাওয়া হয়।
দুদকে জমা কৃত অভিযোগগুলো হলো- অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অথ লোপাট, শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধকালে অবৈধভাবে অ্যাডভোকেট ফি ও অন্যান্য ফির নামে ৬ শতাংশ অর্থ কর্তন, শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দ করা সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ এবং কোম্পানি থেকে দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এদিকে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, গত ২৮ জুলাই গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ-সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠান। ওই প্রতিবেদন কমিশন পর্যালোচনা করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।
দুদক সচিব বলেন, অভিযোগ অনুসন্ধানকালে কর্মকর্তা অবশ্যই গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবেন। #