দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা অবৈধ সম্পদের অর্জনের মামলায় আলোচিত নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত।
তাদের বিরুদ্ধেব ৬ কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। বর্তমানে এই দুই আসামি কারাগারে বন্দি রয়েছেন ।
সোমবার ( ১৪ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ শুনানি শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার পক্ষ থেকে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
জানা যায়, ৪ আগস্ট দুদক ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক শাহীন আরা মমতাজ বাদী হয়ে তাদের দুইজনের নামে মামলাটি করেন। ‘দুদক আইন, ২০০৪’-এর ২৭ (১) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২২ ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওয়েস্টিন হোটেলের ২৫টি রুমে অবস্থান করে রুম-নাইট, রেস্তোরাঁর খাবার, মদ, স্পা, লন্ড্রি, মিনি বার ফুড বাবদ মোট ৩ কোটি ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৬১ টাকার বিল ক্যাশে পরিশোধ করেন পাপিয়া। ওয়েস্টিন হোটেলে থাকা অবস্থায় প্রায় ৪০ লাখ টাকার শপিং করেন। যার কোনো বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি তিনি।
এছাড়া ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাসাভাড়া বাবদ ৩০ লাখ টাকা, গাড়ির ব্যবসায় বিনিয়োগকৃত এক কোটি টাকা এবং নরসিংদীতে কেএমসি কার ওয়াশ সলিউশনে বিনিয়োগকৃত ২০ লাখ টাকা, বিভিন্ন ব্যাংকে পাপিয়া ও তার স্বামীর নামে জমাকৃত ৩০ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৮ টাকারও কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি অনুসন্ধানে।
অন্যদিকে র্যাবের অভিযানে তার বাসা থেকে ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা এবং স্বামীর নামে হোন্ডা সিভিএ ২০১২ মডেলের ২২ লাখ টাকার গাড়ি উদ্ধার করা হয়। এগুলোরও কোনো বৈধ উৎস মেলেনি দুদকের অনুসন্ধানে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেশত্যাগের সময় পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
গ্রেফতার অন্যরা হলেন- পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, নগদ ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জাল মুদ্রা, ১১ হাজার ৯১ ইউএস ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়।
২২ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারের পর ওইদিন রাতেই নরসিংদীর বাসায় এবং পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে হোটেল ওয়েস্টিনে তাদের নামে বুকিং করা বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে অভিযান চালানো হয়।
এছাড়া ফার্মগেট এলাকার ২৮ নম্বর ইন্দিরা রোডে অবস্থিত রওশন’স ডমিনো রিলিভো নামক বিলাসবহুল ভবনে তাদের দুটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড জব্দ করে র্যাব। গ্রেফতারের দিন পাপিয়াকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
আরো উল্লেখ্য যে, ১২ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে করা মামলায় ২০ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া অস্ত্র আইনের আরেক ধারায় তাদের সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুই ধারার কারাদণ্ড একই সঙ্গে চলবে বলে আদেশে উল্লেখ করেন বিচারক। /