নিজস্ব প্রতিবেদক:
২০ লাখ টাকায় খুনিদের ভাড়া করে জমি ব্যবসায়ী রাজধানীর হাজারীবাগের বাসিন্দা এখলাস হত্যার তথ্য গণমাধ্যমকে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা। আর এ হত্যাকান্ডে মূল পরিকল্পনাকারী লেদার মনিরসহ ৫জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্র্রেফতার হওয়া ৫ জন ৪ দিনের রিমান্ডে আছেন।
শনিবার (২২ জুলাই) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান গোয়ন্দা প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি আরও জানান, গত ২০ জুলাই রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হত্যাম কান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়।
ডিবি পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, কামরাঙ্গীরচরের ভ‚মি ব্যবসায়ী এখলাছ গত ২৮ জুন রাত ১০টায় বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। পরে কামরাঙ্গীরচর থানায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। পরদিন সকালে হাজারীবাগ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পশ্চিম পাশ থেকে বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। স্বজনরা সেটি এখলাসের মরদেহ হিসেবে শনাক্ত করেন। বিষয়টি নিয়ে ছায়াতদন্ত শুরু করে লালবাগ বিভাগ।
হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেফতার হওয়া মনির হোসেন ওরফে লেদার মনির ওরফে কোম্পানি মনির এ হত্যাকাÐের মূল পরিকল্পনাকারী। তিনি ২০ লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করেন। ১১ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেন। এ কাজে নিজের সম্পৃক্ততা এড়াতে তিনি জঙ্গিদের মতো ব্যবহার করেছেন ‘কাটআউট’ পদ্ধতি।
গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ঈদুল আজহার আগের রাতকে হত্যার জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। ওই রাতে বাসা থেকে বের হয়ে এখলাস আর ফেরেননি। নিখোঁজের দুই দিন পর কামরাঙ্গীরচর থেকে তার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ১ জুলাই কামরাঙ্গীরচর থানায় মামলা হয়।
এরপর বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ড থেকে আকাশপথে ঢাকায় ফেরার পর বিমানবন্দর এলাকা থেকে পাসপোর্টসহ অভিযুক্ত ঝন্টু মোল্লাকে গ্রেফতার করে ডিবির লালবাগ বিভাগ। তিনি মনিরের ক্যাশিয়ার। তিনি চারদিনের পুলিশ রিমান্ডে রয়েছেন। তার দেওয়া তথ্যে এলিফ্যান্ট রোড ও কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে আবদুর রহমান ওরফে রহমান কাল্লুকে এবং সমন্বয়কারী এসহাককে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় মাগুরা ও যশোরের বেনাপোল বন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফয়সাল এবং মনিরকে গ্রেফতার করে ডিবির অপর দুটি দল। গ্রেফতারের সময় মনিরের কাছে দুটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট, একটি মোবাইল ফোন, ২২ হাজার টাকা ও পাঁচ হাজার রুপি জব্দ করা হয়।
ডিবি প্রধান হারুন জানান, হাজারীবাগ ও সাভার এলাকায় একাধিক ট্যানারি কারখানার মালিক কোম্পানি মনির একজন ভ‚মিদস্যূ এবং দালাল। বিভিন্ন সময়ে তিনি এখলাসকে দিয়ে জমি দখল এবং ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ করান।
কামরাঙ্গীরচর সিএস ২২ দাগের জমিতে এখলাসের ৪০ শতক রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৯০ কোটি টাকা। যার মধ্যে মনির পাবে ৩৫ কোটি টাকা। মনির চেয়েছিল জায়গার সব টাকা নিজে নিয়ে দেবে। কিন্তু বাদ সাধে এখলাস, সে মনিরের এ চেষ্টা রোধ করতে একাধিক মামলা ও ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন তিনি। এখলাসকে দমাতে বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে মনির হত্যার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়েছে ডিবি।
পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, নোয়াখালীর দিনমজুর আবদুর রহিমের ছেলে মনির হোসেন। আবদুর রহিম হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানায় দিনমজুরের কাজ করতেন। ১৯৮০/৮২ সালে বাবার সঙ্গে মনির হোসেন ট্যানারি কারখানায় চামড়ার ময়লা পরিষ্কারের কাজ নেন। পরে সন্ত্রাসী ইমনের পৃষ্ঠপোষকতায় নিজেই চামড়া কেনাবেচা শুরু করেন মনির। এর সঙ্গে জমি দখল, দালালি ও ব্যবসাতেও যোগ দেন। বর্তমানে তিনি চার-পাঁচটি ট্যানারি এবং কয়েক কোটি টাকার মালিক বলে জানা গেছে।
২০০২ সালে সিকদার পেট্রল পাম্পের সামনে গুলি করে রুহুল আমিন নামে একজনকে হত্যা করা হয়। ওই মামলায় অন্যতম আসামি ছিলেন এ মনির। ২০১৫ সালে ইফতারির আগে জসিম ওরফে গুন্ডা জসিম নামে একজনকে হাজারীবাগ বাজারে গুলি করে হত্যা করা হয়। এতেও তিনি অভিযুক্ত হন। টাকা ও প্রভাবশালীদের তদবিরে মনির সেসব মামলায় জামিন পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বলে জানায় ডিবি।#কাশেম