নিজস্ব প্রতিবেদক:
ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রায় ১৮৭ কোটি টাকার ঋণ খেলাপির মামলায় চট্টগ্রামের ইমাম গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলীসহ ৬জনকে পাঁচমাসের কারাদন্ড দিয়েছে বিচারিক আদালত। দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী, তার স্ত্রী জেবুন নাহার, তাঁদের ছেলে আলী ইমাম, মনির আহম্মদ সওদাগর, ফেরদৌস বেগম ও রিজিয়া বেগম।
রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান ঋণ খেলাপির মামলায় ইমাম গ্রুপের এমডি মোহাম্মদ আলীসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এই রায় প্রদান করেন।
দন্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৪ সালে ন্যাশনাল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় খেলাপি হওয়া প্রায় ১৮৭ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যে তাদের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় গত ১১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বিচারক আসামীদের পাঁচ মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেন। আদালতের বে সহকারী মো. রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে বাধ্য করতে আদালত ইমাম গ্রুপের এমডিসহ ৬জনকে পাঁচ মাস করে কারাদন্ড দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এর আগে ২০১২ সালে তাদের বিরুদ্ধে অর্থ ঋণ মামলা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ২০১২ সালের পর তারা ব্যাংক অর্থ পরিশোধ না করায় ২০১৪ সালে অর্থ ঋণ মামলার রায় পায় ব্যাংক। এরপর ওই বছরই ১৮৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা আদায়ে জারি মামলাটি দায়ের করেন।
সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, ইমাম গ্রুপের মোহাম্মদ আলী বেশ কয়েকটি দেওয়ানি ও ফৌজদারী মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে গোপনে পালিয়ে আরব-আমিরাতে অবস্থান করছেন। অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলীর মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে দেশের ১৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০০ কোটি টাকা পাওনা আটকে গেছে। যার বেশিরভাগই খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে।
খেলাপি ঋণ আদায় ও চেক ডিজঅনার হওয়ায় গ্রুপটির বিরুদ্ধে ৬০টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ৫৫ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এছাড়া ১০টিরও বেশি চেক ডিজঅনার মামলায় দুই বছরের কারাদÐ হয় তার বিরুদ্ধে। ২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে বেশিরভাগ ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। এক দশকেও ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১২-১৩ সালের দিকে তার বিরুদ্ধে একে একে মামলাগুলো দায়ের হতে থাকে।
নব্বই’র দশকে অবৈধ পথে পণ্য আমদানি করে ব্যবসার জন্য চট্টগ্রামে তিনি ‘বø্যাকার মোহাম্মদ আলী’ নামে পরিচিতি পান। এর আগে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ- টেরিবাজার এলাকায় বিভিন্ন দোকানের কর্মচারি হিসেবে কাজ করতেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের বাজারের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতো তার মালিকানাধীন ইমাম ট্রেডার্স।
পরে গ্রুপের ব্যবসা স¤প্রসারণ হয় গার্মেন্টস, যন্ত্রপাতি আমদানিসহ নানা খাতে। এসব খাতে বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের বেশিরভাগ বিনিয়োগ হয়েছে জমি কেনায়। ২০১০ সালের পর থেকে ভোগ্যপণ্য ও ভূমি ব্যবসায় লোকসান শুরু হলে প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করা বিভিন্ন ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ ঋণ আটকে যায়।
অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলী দেশত্যাগ করেছেন বলে আদালতে অভিযোগ করেন ব্যাংকের আইনজীবী। ব্যাংকের কাছে তাঁদের বন্ধক রাখা সম্পত্তি আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ওই সম্পত্তি ডিক্রিদার ব্যাংক বিক্রির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন বলে আদালতকে জানানো হয়। #