দূরবীণ নিউজ ডেস্ক :
১৯০৮ সালে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) সংঘর্ষ ও দুই ছাত্র মারা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই ঘটনায় মামলা দায়ে করে।
এদিকে সিআইডি ১২ বছর পর ওই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দুটি চার্জশিট দাখিল করেছে ।
আরো জানা যায়, হত্যা ও সংঘর্ষের ঘটনার শাস্তি বিধান সংশ্লিষ্ট ৮টি ধারায় এবং ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উৎপাদনাবলি আইনের ৩/৪ ধারায় দুটি চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তবে চার্জশিট দুটি গ্রহণের বিষয়ে এখনও শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি।
গত ২৬ জুলাই দিনাজপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১ (সদর)- এ চার্জশিট দুটি দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির এসআই ফয়সাল আমীন।
দিনাজপুর আদালত পুলিশ পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ৩ দিন আগে আমি চার্জশিটের কপি হাতে পেয়েছি।
চার্জশিটে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও জেলা শহরের নিমনগর বালুবাড়ী এলাকার ইসরাফিল শাহর ছেলে ইফতেখারুল ইসলাম রিয়েল (৩০), বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া গাবতলী থানার তেলীহাটি পচানিপাড়া এলাকার শরৎ চন্দ্র রায়ের ছেলে অরুন কান্তি রায় সিটন (৩০), ছাত্রলীগ নেতা ও দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার জোত সাতনালা গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে আতিকুর রহমান রানা (২৬), গাইবান্ধা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মধ্য মিরুপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদ সরকারের ছেলে এসএম জাহিদ হাসান (২৪), দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার দক্ষিণ পলাশবাড়ী এলাকার মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেনের ছেলে গোলাম আজম সিফাত (২২), রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে আহসান হাবীব শাওন (২৩), নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার কৈচরপাড়া এলাকার জাহিদ আলীর ছেলে গোলাম রাব্বী ডলার (২২), জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার পূর্ব মাতাপুর এলাকার আজিজুল হকের ছেলে রিয়াজুল হক সাধন (২৪), বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার লতিফপুর উত্তরপাড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খলিল আকন্দর ছেলে খালিদ সাইফুল্লাহ আমিনুল মিল্লাত (২৪), নওগাঁ সদর উপজেলার হাসাইগাড়ী উপজেলার পিএম সাইফুল আলমের ছেলে মনিরুল হাসান সুমন (২০), নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার চন্দ্রখইর নওদাপাড়া এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে লিয়াকত হোসেন নয়ন (২০), নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ভগবানপুর এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে সামিউল ইসলাম নাঈম (২৬), নওগাঁর রানীনগর উপজেলার আত্তাইকুলা দক্ষিণপাড়া এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে এসএম আহসান হাবীব ওরফে রিজভী হাবীব (২৫) ও জয়পুরহাট সদর উপজেলার শান্তিনগর এলাকার অভয় দেবনাথের ছেলে বিজন কুমার দেবনাথ (২৬)।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মামলাটির সূত্রপাত বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য রুহুল আমীন কর্তৃক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অরুন কান্তি রায় সিটনকে ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির অভিযোগে ২০১৪ সালের ৪ নভেম্বর বহিষ্কার করার বিষয়ে। তখন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় ছাত্রলীগ উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।
এ সময় আন্দোলন দমানোর জন্য ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত কিছু সদস্য একটি নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করে এবং ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি আন্দোলনকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মারপিট করে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত ছাত্রলীগের সদস্যরা তাদের ক্ষমতা ও আধিপত্য পুনরুদ্ধারের জন্য ক্যাম্পাসে আক্রমণের পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে নবীনবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে তারা হামলা চালায়। এ সময় তারা ককটেল বিস্ফোরণ, পিস্তল থেকে গুলিবর্ষণ করে। এছাড়াও লাঠি, সামুরাই ও রড দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করে যাতে অনেকেই আহত হয়। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হলে হামলা করে ভাঙচুর চালায় এবং শিক্ষার্থীদের মারধর করে ও ইট-পাটকেল ছুড়ে আহত করে।
এ সময় ছাত্রলীগের অন্য একটি দল সেখানে গিয়ে ধাওয়া করলে হামলাকারীদের অনেকেই শেখ রাসেল হলের বিভিন্ন তলা থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আহত হয়। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখান থেকে কয়েকজন আসামিকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে।
পরে তাদেরকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাকারিয়া ও মাহমুদুল হাসান মিল্টনকে মৃত ঘোষণা করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে ৩টি ককটেল সদৃশ বস্তু, ছোট-বড় ৮টি সামুরাই ছোরা, ৪টি লোহার রড, ১২টি বাঁশের লাঠি ও গাছের ডাল আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়।
এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এটিএম শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।’ এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির এসআই ফয়সাল আমীন জানান, ‘মামলাটি তদন্ত শেষে আমি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছি।
উল্লেখ্য, মারামারি ও হত্যার ঘটনায় পৃথক ৪টি মামলা দায়ের করা হয়। গত বছরের মার্চে মামলাগুলো পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডিতে) স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছরেও মামলার কোনও কুলকিনারা না হওয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দুই নিহত ছাত্রলীগ নেতার জাকারিয়া ও মাহমুদুল হাসান মিল্টনের বাবা-মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ছেলেহারা দুই পরিবারের বাবা-মাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিকভাবে সহায়তাসহ সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন। #