দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক:
বহুল আলোচিত মানবপাচার মামলায় কুয়েতে দণ্ডপ্রাপ্ত ও কারাবন্দি লক্ষ্মীপুর-২ এর এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী-মেয়ের জামিন আবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তার নথি জালিয়াতির তদন্ত দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশসহ রায় প্রদান করেছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় দেন।
আজ বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। আর জামিন আবেদনকারী আসামিদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবিন রাব্বানী দীপা ও আন্না খানম কলি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।
খুরশীদ আলম বলেন, আগাম জামিন আবেদনে নথি জালিয়াতির অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুই মাসের মধ্যে দুদক সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম ও তার মেয়ে ওয়াফা ইসলাম এবং তদবিরকারক হাফেজ আহমেদসহ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রতিবেদন দেবে।
দুই কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ ও ১৪৮ কোটি টাকার অর্থ পাচারের অভিযোগে শহিদ ইসলাম পাপুল, তার স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালিকার বিরুদ্ধে গতবছর ১১ নভেম্বর মামলা করে দুদক। এ মামলায় গতবছর ২৬ নভেম্বর তারা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন।
এর মধ্যে পাপুলের স্ত্রী ও মেয়ের আবেদনের শুনানি নিয়ে তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন আদালত। তবে তাদের আবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নথি জমা দেয়া হয়। যেখানে বলা হয়, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের একটি শাখার হিসাবে অর্থপাচার সংঘটিত হতে পারে মর্মে প্রতীয়মান হয়নি।
বিষয়টি আদালতের নজরে আসায় ওই নথিতে স্বাক্ষরকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-পরিচালক মো. আরেফিন আহসান মিঞাকে তলব করে সুয়োমোটো রুল জারি করেন আদালত।
তিনি হাজির হয়ে বলেন, এ নথি টেম্পার (জালিয়াতি) করা হয়েছে। তবে পাপুলের স্ত্রী-কন্যার আইনজীবীর দাবি, এ নথি এনআরবি ব্যাংক তাদের সরবরাহ করেছে।
এরপর আদালত এনআরবি ব্যাংকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। গত ১২ জানুয়ারি এনআরবি ব্যাংক জানায়, তারা এ ধরনের নথি দেননি। এরপর আদালত এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব নথি তলব করেন। এ আদেশ অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংক নথি দাখিল করেন।
নথি উপস্থাপন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী আদালতে বলেন, জামিন আবেদনে দেয়া নথির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নথির মিল নেই। জামিন আবেদনে যা দাখিল করা হয়েছে তা জালিয়াতি হয়েছে। এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তার তদন্ত হওয়া দরকার।
শুনানিতে জামিন আবেদনকারীর আইনজীবীও বলেন, ওই নথি যদি জালিয়াতি হয়ে থাকে তবে এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা তদন্ত হওয়া দরকার।
শুনানি শেষে আদালত ১১ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। সে অনুসারে আজ এই রায় দেন হাইকোর্ট।
জানা যায়, গতবছর ৬ জুন কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) শহিদ ইসলাম পাপুলকে সে দেশে গ্রেফতার করে। কুয়েত সিআইডি তার বিরুদ্ধে সেখানে মানবপাচার ও অর্থপাচারের মামলা করেছে। সে মামলায় চার বছরের সাজা হয় পাপুলের। পাপুল এখন কুয়েতে কারাবন্দি।/